দ্রোহ ডেস্ক
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস নিয়ে প্রতিদিনই নতুন তথ্য সামনে আসছে। চীনের ইমার্জিং ইনফেকশন ডিজিস জার্নালে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস ১৩ ফুট দূর পর্যন্ত যেতে পারে। চীনের গবেষক দল উহানের এক হাসপতালের কভিড-১৯ আক্রান্তদের আইসিইউ ও জেনারেল ওয়ার্ডের বাতাস ও মেঝের থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এই তথ্য পেয়েছেন। তারা দেখেছেন, হাসপাতালের মেঝেতেই সবচেয়ে বেশি ভাইরাস পড়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। তাদের দেয়া তথ্যে বর্তমানে মানুষকে দ্বিগুণ সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হবে।
গবেষকরা বলছেন, বাতাসে ভেসে বেড়ানোর ক্ষেত্রে আক্রান্তের থেকে ১৩ ফুট দূরত্বের মধ্যেই সেটি ঘুরে বেড়াচ্ছে। আইসিইউ মেডিক্যাল কর্মীদের জুতার সোলেও অর্ধেক ভাইরাস পাওয়া গেছে।
চীনের বেইজিংয়ের মিলিটারি মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যাকাডেমির গবেষকরা উহানের হুশেনশা হাসপাতালের আইটিইউ ও সাধারণ কভিড-১৯ ওয়ার্ডের থেকে বাতাস ও মাটির নমুনা পরীক্ষা করেছিলেন। এই হাসপাতাল ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত ২৪ জন রোগী রেখেছিল।
এরোসেল (মানুষের হাঁচি-কাশির সঙ্গে বের হওয়া জলকণা) সংক্রমণ নিয়েও এই গবেষকের দল পরীক্ষা করছে। তারা দেখেছেন, ভাইরাসবাহিত এরোসেলগুলো সাধারণত রোগীদের কাছাকাছি ১৩ ফুট পর্যন্ত ভেসে যায়। কমপক্ষে আট ফুট পর্যন্ত ভেসে থাকতে পারে।
বাতাসে করোনার দৌড় কতো?
সরকারের কড়া সমালোচনায় মির্জা ফখরুল
দ্রোহ ডেস্ক
করোনা মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের অপকর্মের কারণেই এই মহাদুর্যোগের সময় দেশে আরও অনিশ্চয়তার অন্ধকার নেমে এসেছে। এই করোনা মহামারীর মধ্যেও দলমত নির্বিশেষে সমন্বিত উদ্যোগ দূরে থাক বরং সরকার এক অশুভ অভিপ্রায় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে ত্রাণ কর্মকা- চালানোর সময় রাজশাহীর তানোর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল মালেককে গ্রেফতার ও কারাদ- দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনার উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব। একই সঙ্গে ছাত্রদল নেতা আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাসহ দ-াদেশ প্রত্যাহার করে অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সোমবার সকাল থেকে তানোর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে করোনাভাইরাসের মহামারীতে আতঙ্কগ্রস্ত কর্মহীন অসহায় মানুষের মাঝে বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। বিকালে পৌর এলাকার ৫০০ সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করার সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বাধা দেয় এবং সেখান থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছাত্রদল নেতা আবদুল মালেককে গ্রেফতার করে ৬ মাসের কারাদ- প্রদান করে। করোনাভাইরাসের দুর্যোগকালীন সময়ে যখন দুর্ভিক্ষের ছায়া বিরাজমান তখন ক্ষুধার্ত ও নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় সেটিকে বাধা দেয়ার ঘটনা বিদ্যমান দুঃশাসনেরই প্রতিফলন।
তিনি বলেন, প্রতিদিন প্রতিনিয়ত দেশব্যাপী সরকারদলীয় লোকজনদের দ্বারা ত্রাণ সামগ্রী চুরির ঘটনা ঘটছে এবং তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ভ্রুক্ষেপহীন থাকছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও পুলিশি ক্ষমতার যথেচ্ছ প্রয়োগ থেমে নেই। বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো নিজ উদ্যোগে সারা দেশে সুবিধাবঞ্চিত খেটে খাওয়া অসহায় মানুষদের মাঝে যখন মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তখন এই মানবিক উদ্যমকে সহ্য করতে পারছে না সরকার। তাই দলীয় লোকজনদেরকে দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হিংগ্র আচরণ করানো হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে।
দেশব্যাপী ক্ষমতাসীন দলের লোকজনদের চাল কেলেঙ্কারীর মতো অপকর্ম ঢাকতেই তরুণ ছাত্রদল নেতা আবদুল মালেককে গ্রেফতার করে কারাদ- দেয়া হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।
দৌলতপুরে ত্রাণ আত্মসাতের দায়ে ইউপি সদস্য গ্রেফতার
দৌলতপুর প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণের ত্রাণসামগ্রী আত্মসাতের অভিযোগে হাবিবুর রহমান ওরফে হবি মেম্বার নামে এক ইউপি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপুরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি দৌলতপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। এ বিষয়ে দৌলতপুর থানায় মামলা হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, করোনার দুর্যোগকালীন অসচ্ছল ও দুস্থদের জন্য সরকার কর্তৃক বরাদ্দের ত্রাণ (চাল, ডাল, আলু, সাবান) নিজ ওয়ার্ডে বিতরণের জন্য ওই ইউপি সদস্যকে প্রদান করা হয়। শুক্রবার দুই-একজনের মধ্যে বিতরণ করে বাকি ত্রাণসামগ্রী আত্মসাৎ করেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, হবিবর রহমান ওরফে হবি মেম্বার গরু ক্রয় করে গ্রামের বিভিন্ন মানুষের মাঝে বর্গা দিয়ে রেখেছেন। ত্রাণের চাল ও অন্যান্য সামগ্রী দুস্থদের মাঝে না দিয়ে গরুর খাবার হিসেবে তিনি ওই চাল ব্যবহার করছেন।
হবি মেম্বরের গরুর বর্গাচাষী অনেকে ওই চাল গরুকে খাওয়ানোর কথা স্বীকার করায় বিষয়টি জানাজানি হয়। এ ঘটনা পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করলে দৌলতপুর থানার পুলিশ অভিযোগের সত্যতা পায়। পরে মঙ্গলবার তাকে গ্রেফতার করে।
দৌলতপুর থানার ওসি এসএম আরিফুর রহমান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে তার বিরুদ্ধে ত্রাণসামগ্রী আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
৩১ মার্চ পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ
দ্রোহ ডেস্ক:
নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আতঙ্কের মধ্যে সারা দেশের সব শিাপ্রতিষ্ঠান ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
শিামন্ত্রী দীপু মনি সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, “সতর্কতমূলক পদপে হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিার্থীরা যাতে বাড়িতে থাকে তা সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে।”
মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্ত এসেছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, কোচিং সেন্টারের েেত্রও এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
১ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের এইচএসসি পরীা শুরুর সূচি রয়েছে। তার আগেই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবে বলে জানান শিামন্ত্রী।
তার এই ব্রিফিংয়ে আধা ঘণ্টা আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ এক জরুরি সভা করে ১৮ থেকে ২৮ মার্চ সব কাস-পরীা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত জানায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, শিক- শিার্থীদের ‘দাবি ও পরামর্শের ভিত্তিতে’ তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কাস-পরীা বন্ধের এই সময়টা পরে গ্রীষ্মকালীন ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে নেওয়া হবে। আপাতত কাস-পরীা বন্ধ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কার্যক্রম চলবে; আবাসিক হলগুলোও খোলা থাকবে।
পোশাক শিল্পে স্বাস্থ্যবিধি মনিটর করতে আলাদা কমিটি হচ্ছে
পোশাক শিল্পের স্বাস্থ্যবিধি মনিটর করতে আলাদা কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ফ্যাক্টরিতে একটি করে মেডিক্যাল দল থাকবে, সেই দল আমাদের নির্দেশনা পালনে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে।’
একই সঙ্গে কর্মীদের তালিকা তৈরি করে স্ব স্ব জেলায় রাখা এবং কোনো কর্মী ফেরত গেলে তাকেসহ বাড়ি লকডাউনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
রোববার (০৩ মে) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘করোনা পরিস্থিতিতে শিল্প, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে চালু রাখা সংক্রান্ত’ বিষয়ে বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বৈঠকে পোশাক শিল্পের গার্মেন্টসগুলোর স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তার মধ্যে মূল ফোকাস ছিল, ফ্যাক্টরি চালানোর ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা যেন আমাদের শ্রমিকরা পান। তারা যেখানে কাজ করবেন, সেখানে যেন মিনিমাম দূরত্ব থাকে, তাদের পরিবহন যেন সঠিক হয়, তাদের থাকা-খাওয়ার বিষয়টিতেও যেন গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাদের কোয়ারেন্টিন প্রয়োজন হলে সেটি যেন করা হয়।’
‘আমাদের তিনটি হটস্পট নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও গাজীপুরের এলাকাগুলোর বিষয়ে বিশেষভাবে দেখতে পুলিশ প্রশাসনকে বলেছি। এসব জেলা থেকে যেন কেউ বাইরে না যান এবং বাইরের কেউ যেন না ঢোকেন।’
তিনি বলেন, গার্মেন্টস মালিকরা যেন সব সুবিধা তৈরি করে দেন। টেস্টের প্রয়োজন হলে শ্রমিকরা যেন করতে পারেন, সে বিষয়টি তারা দেখবেন এবং আমরাও সেই এলাকায় টেস্টের ব্যবস্থা করবো। গার্মেন্টস শিল্পের স্বাস্থ্যবিধি মনিটর করতে আলাদা কমিটি করা হবে। প্রতিটি ফ্যাক্টরিতে একটি করে মেডিক্যাল টিম আমাদের নির্দেশনা পালনে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। তারা ন্যাশনাল কমিটির কাছে প্রতিনিয়ত রিপোর্ট করবেন।’
কোনো ফ্যাক্টরিতে বেশি আক্রান্ত হলে প্রয়োজনে সেটি কিছুদিনের জন্য শাটডাউন করা হবে। একই সঙ্গে পরিবহনের বিষয়ে উদ্যোগ নিতে গার্মেন্টস মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, ‘লকডাউন চলাকালে একবার যেসব শ্রমিক ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের ভেতরে চলে আসছেন, তাদের সেখানেই থাকতে হবে। এসব জেলায় যে পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ না কমবে বা নির্ধারিত লকডাউনের মেয়াদ শেষ না হবে সে পর্যন্ত তাদের অবশ্যই ওই এলাকায় থাকতে হবে। আমরা তাদের বের হতে নিষেধ করবো।’
‘কেউ যদি চলে যান, সেজন্য আমরা সব জেলায় নির্দেশনা দিচ্ছি, যারা গার্মেন্টস শিল্প বা অন্যান্য শিল্পে কাজ করতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে এসেছেন, তাদের তালিকা রাখা হবে স্ব স্ব জেলায়। যেন কেউ ফেরত চলে গেলে তাদের তালিকা ধরে বের করে কোয়ারেন্টিনে রাখা এবং সেই কর্মীসহ বাড়ি লকডাউনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর- এই তিনটি জেলায় সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণ হয়েছে। কিভাবে এসব জেলার মানুষকে আলাদা করে রাখতে পারি এবং কিভাবে তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে বেশি সংক্রমিত হলে তাদের জন্য আইসোলেশন সেন্টার করা, হাসপাতাল নির্ধারণ এবং প্রয়োজনে টেস্ট কিভাবে বেশি করা যায় সেটি নিশ্চিতের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।’
‘ফ্যাক্টরিগুলোতে সংক্রমণ রোধে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নেবেন। এবং ফ্যাক্টরিতে ঢোকার আগে এবং সেখানে থাকার সময়ে কি কি ব্যবস্থা নেবেন, সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। একই সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানার পাশাপাশি গণপরিবহনও বন্ধ হয়ে যায়। এতে শ্রমজীবী মানুষ সংকটের মধ্যে পড়েছেন। পাশাপাশি উৎপাদনও স্থবির হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় শিল্প কারখানা চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা।
বৈঠকে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, শিল্পসচিব, শ্রমসচিব, বাণিজ্যসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), এফবিসিসিআই সভাপতি, বিজিএমইএ সভাপতি, ডিসিসিআই সভাপতি, বিকেএমইএ সভাপতি, বিটিএমইএ সভাপতি, এমসিসিআই সভাপতি এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
সরকার সিদ্ধান্ত দিলেই চলবে গণপরিবহন
দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব না কমলেও গণপরিবহন চালুর আভাস মিলছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেলেই ট্রেন চালু করতে প্রস্তুত রেলওয়ে। সেই সঙ্গে সরকার প্রধানের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন বাস মালিকরাও।
৮ মে থেকে সীমিত পরিসরে আকাশ পথে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার আভাস দেওয়ায় সীমিত পরিসরে বাস ও ট্রেন চলাচলেরও নির্দেশনা আসতে পারে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালুর চিন্তা হলেও কতটা স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতে ২৪ মার্চ অফিস-আদালত বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার। ২৬ মার্চ থেকে সব গণপরিবহন সড়ক, রেল ও নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ ছুটি তিন দফায় বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করার আভাস মিলেছে।
তবে সাধারণ ছুটি থাকলেও ইতিমধ্যে সীমিত পরিসরে গার্মেন্টস কারখানা খুলেছে। সেই সঙ্গে রেস্তোরাঁসহ কিছু ক্ষেত্রে শিথিলতার পথে হাঁটছে সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার গণপরিবহনও পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়ার কথা ভাবছে।
সূত্র বলছে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ প্রথম ধাপে ব্যক্তিগত বাহন চালুর ব্যাপারেই বিবেচনা করছে। দ্বিতীয় ধাপে গণপরিবহন সীমিত আকারে চালুর বিবেচনা করছে। এছাড়া শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ৭০-৭৫ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালুর কথাও ভাবা হচ্ছে।
স্টেশনের পরিবর্তে অনলাইনে টিকিট বিক্রির পরিকল্পনাও রয়েছে রেলের। সরকারের ঘোষণা পেলে বাস্তবায়নে যাবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আর গণপরিবহন সচল হতে থাকলে শেষভাগে সুযোগ দেওয়া হতে পারে নৌপথে যাত্রী পরিবহন। তবে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলে সেই সিদ্ধান্ত হতে পারে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, আপাতত গণপরিবহন চালুর বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। আমরা তাকিয়ে আছি সরকার প্রধানের দিকে। সরকার অনুমতি দিলেই আমরা কেবল বাস চালাবো।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান বলেন, সরকার যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত দিলেই কেবল ট্রেন চলবে। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
রংপুর বিভাগের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স সোমবার
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে সোমবার রংপুর বিভাগের অন্তর্ভুক্ত জেলাসমূহের জনপ্রতিনিধি এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে এ ভিডিও কনফারেন্স শুরু হবে বলে রোববার জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। খবর: ইউএনবি
রংপুর বিভাগের জেলাগুলো হলো- পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর এবং গাইবান্ধা।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল এবং রেডিও স্টেশন ভিডিও কনফারেন্স সরাসরি সম্প্রচার করবে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ছয় ধাপে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ এবং রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেছেন।
২৪ ঘণ্টায় দেশে রেকর্ড আক্রান্ত
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে বাড়ছে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। নমুনা পরীক্ষার আওতা বাড়ার পর থেকে আক্রান্তের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন করে ৬৬৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে ৫ হাজার ৩৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এটিই এক দিনে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা এবং সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা।
এ নিয়ে দেশে শনাক্ত হওয়া আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৯ হাজার ৪৫৫ জনে পৌঁছাল। একই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৭৭ জনে। আর এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৮১ হাজার ৪৩৪ জনের।
রোববার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত ভার্চুয়াল বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
মৃতের তালিকা পর্যালোচনা করে ডা. নাসিমা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ২ জন ঢাকার বাইরের। একজন রংপুর এবং একজন নারায়ণগঞ্জের। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ৬০ বছরের উপরে এবং আরেক জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।
নাসিমা সুলতানা বলেন, কাকে সুস্থ বলা যাবে, সেই নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। সে হিসেবে দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে মোট ১ হাজার ৬৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। শনিবার পর্যন্ত হাসপাতালে থাকা রোগীদের মধ্যে মোট ১৭৭ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনের চিত্র তুলে ধরে ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, গত চব্বিশ ঘণ্টায় আরও ৬৫ জনকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে। এখন আইসোলেশনে আছেন এক হাজার ৩৩৭ জন। এ থেকে মুক্ত হয়েছেন ৬০ জন। এ পর্যন্ত এ সংখ্যা ১ হাজার ৮২ জন। দেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ৯ হাজার ৬৩৮টি। এরমধ্যে ঢাকা মহানগরে ৩ হাজার ৯৪৪টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ৫ হাজার ৬৯৪টি।
সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩১টি ল্যাবে এখন করোনাভাইরাস পরীক্ষা হচ্ছে বলেও এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।