কুমারখালী প্রতিনিধি
কুমারখালী পৌরসভার প্রায় এক কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার বিল বকেয়ার দায়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যস্ততায় দেড় ঘন্টা পর আবার বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বেলা পৌনে একটার দিকে পৌরসভার কার্যালয় ভবনের ৬ টি প্রি- পেইড মিটারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ ঘটনায় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা – কর্মচারীদের সঙ্গে পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর ও তাঁদের সহযোগীদের বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিরুল আরাফাত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। পৌরসভার কার্যালয়ে উভয়পক্ষ নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে প্রায় দেড়ঘণ্টা পরে দুপুর ২ টা ১০ মিনিটের দিকে পুনরায় ৬ টি মিটারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় কর্তৃপক্ষ।
কুমারখালী ওজোপাডিকোলি’র কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, কুমারখালী পৌরসভায় ৯ টি বিদ্যুৎ মিটার রয়েছে। তার মধ্যে ২০০৭ সাল থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ৬ টি মিটারে প্রায় এক কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার ১২৩ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। বিল পরিশোধের জন্য বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বারবার পৌর কর্তৃপক্ষকে নোটিশ প্রদান করেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৮ মে নোটিশ পাঠানো হয়। তবুও বিল পরিশোধ না করায় বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১ টার দিকে ৬ টি মিটারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে উভয়পক্ষের আলোচনা সাপক্ষে ২ টা ১০ মিনিটের দিকে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। সেসময় প্রতিমাসে আনুমানিক দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার ব্যবহার করত পৌর কর্তৃপক্ষ।
আরো জানা গেছে, ২০২২ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে পৌরসভার মিটার গুলো ডিজিটাল থেকে প্রি – পেইডে পরিবর্তন করা হয়। পরিবর্তনের ফলে পৌর কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি করেন। এবং প্রতিমাসে প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার টাকার বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন তাঁরা। ডিজিটালের চেয়ে প্রি-পেইড মিটারে বিল কম হওয়ায় বকেয়া বিল পরিশোধে তালবাহানা শুরু করেন পৌর কর্তৃপক্ষ। এরপর বর্ধিত বিলের প্রতিকার চেয়ে ২০২৩ সালে জুনমাসে কুষ্টিয়া সিভিল কোর্টে একটি মামলা করেন পৌর কর্তৃপক্ষ। ওই মামলা চলমান রয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার কার্যালয় ভবনের সামনের সড়কে পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা – কর্মচারী, পুলিশ ও উৎসুক জনতা। তাঁদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুপুর ১ টা ১৫ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে আসেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিরুল আরাফাত। তিনি উভয়পক্ষকে নিয়ে মেয়রের কার্যালয়ে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে দুপুর ২ টা ১০ মিনিটের দিকে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেন বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
কুমারখালী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামছুজ্জামান অরুন। পরে তিনি জানান, বিলের রেট নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। তা মিটমাট হয়ে গেছে। এটা রিপোর্ট করার মতো কোনো ঘটনা নয়।
কুমারখালী ওজোপাডিকোলি’র আবাসিক প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা জানান, পৌরসভায় ২০০৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এক কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার ১২৩ টাকা বকেয়া বিল রয়েছে। বারবার বিল পরিশোধের নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। তবুও পৌর কর্তৃপক্ষ বিল পরিশোধ না করায় আজ ৬ টি মিটারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। এনিয়ে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। পরে উপজেলা প্রশাসন উভয়পক্ষকে নিয়ে বসাবসি করেন। সেখানে বিল পরিশোধের আশ্বাস দেন পৌর কর্তৃপক্ষ। এরপর প্রায় দেড়ঘণ্টা পরে পুনরায় পৌরভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিরুল আরাফাত জানান, দুটোই সরকারি প্রতিষ্ঠান। সেজন্য উভয়পক্ষ নিয়ে বসাবসি করা হয়েছে। খুব দ্রæত উভয়পক্ষ তাঁদের সমস্যা মিটিয়ে নেবেন বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।