খোকসায় ইউএনওর গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে

0
154
আহত পুলিশের এসআই

স্টাফ রিপোর্টার

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা দুইদিন ধরে মারমুখি অবস্থানে রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও’র)সরকারী গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। চলমান তান্ডব ও হামলায় পুলিশের এক এসআইসহ ৫জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা প্রতিকের প্রার্থী বাবুল আখতার ও ঘোড়া মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী মোতাহার হোসেন খোকনের মধ্যে প্রচারণা শুরুর আগে থেকে বিরোধ শুরু হয়। ইতোমধ্যে প্রতিদ্ব›দ্বী দুই প্রার্থী তাদের নেতাকর্মীর উপর হামলা ও অফিস ভাংচুরের অভিযোগ করে আসছেন।

শনিবার সন্ধ্যায় দুই পক্ষের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। আতঙ্কে মুহুত্যের মধ্যে উপজেলা সদরের প্রধান বাজার ও বাস স্ট্যান্ড এলাকার প্রায় দেড় হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। এক পর্যায়ে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন দুই প্রার্থীর সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। এ সময় দুই প্রার্থীর সমর্থকরা একাধিক নির্বাচনী অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। শনিবার রাতে এ হামলার সময় পুলিশের বহরে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারী গাড়িটি ভাংচুর করে উত্তেজিত নেতা কর্মীরা। গাড়িটির পেছনের অংশের কাঁচ ভেঙ্গে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্থ্য আছেন। তবে রাতে দুই পক্ষের হামলা পাল্টা হামলার সময় ইটের আঘাতে খোকসা থানার এসআই আসাদুজ্জান আহত হয়েছেন। রাতেই তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এছাড়া নৌকা প্রতিকের কর্মী কায়েস নামের এক যুবক প্রতিপক্ষের গুলিবিদ্ধ আহত হন। তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রবিবার দুপুরে সিরাজপুর হাওড় নদী উৎস মুখে নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর গ্রামের লোকদের উপজেলা সদরের প্রবেশে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পর পরিস্থিতির আবার অবনতির শঙ্কায় বাজারের ব্যবসায়ীরা দোকান পাট বন্ধ করে দেয়। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অধিকাংশ দোকান পাট ও বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ গুলো বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে আবারো হামলার আশঙ্কা করছে সাধারন মানুষ ও ব্যবসায়ীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত যে কোন সমস্যা হলে বাজারের ব্যবায়ীদের উপর তান্ডব শুরু হয়। আতঙ্কিত হয়ে ব্যবসায়ীরা দোকান পাট বন্ধ করে প্রাণ ভয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। তারা এই নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তির দাবি করেন।

হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ্য ইউএনওর গাড়ি

ঘোড়া মার্কা প্রতিকের সতন্ত্র প্রার্থী মোতাহার হোসেন খোকনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গত ২৭ অক্টোবর রাতে হেলমেট পরিহৃত সন্ত্রাসীরা তার কর্মী আজাদ আলীর উপর হামলা করে। শনিবার সন্ধ্যায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সামনে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী তার এক কর্মীর উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন। এ ছাড়া তারা একাধিক কর্মী ও সমর্থকের ওপর হামলা প্রচার মাইক ভাংচুর এবং পোষ্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করেন।

নৌকা প্রতিকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আখতার জানান, প্রতিপক্ষের হামলায় তার কয়েকজন কর্মী গুলিবিদ্ধ আহত হয়েছেন। হামলা কারীরা তার নির্বাচনী অফিস ও সমর্থকদের দোকান ভাংচুর করেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ্বাস জানান, শনিবার সন্ধ্যা থেকে দুই প্রার্থীকে শান্ত করার চেষ্টা করা হয়। সাড়ে ৭ টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইবের চলে গেলে পুলিশের দুটি গাড়িসহ তার গাড়ি বাজার অতিক্রম করার সময় আক্রান্ত হয়। তার চালক বাদশা বাদি হয়ে থানায় মামলা করেছে। এ ছাড়া রবিবার সকাল থেকে অতিরিক্ত তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট, র‌্যাব ও একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি বড় বহর মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন – খোকসার উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচন কেন্দ্র করে হামলা পাল্টা হামলা

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আশিকুর রহমান জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, ইউএনও এবং একজন এডিশনাল এসপিসহ প্রচুর পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। শনিবার ও রবিবারের ঘটনায় কোন পক্ষই থানায় মামলা করেনি।