ঈদ নেই নিহত সাংবাদিক বৃষ্টির বাড়িতে

0
27

স্টাফ রিপোর্টার

ছেলে সন্তান ছিল না। তাই মেয়েদের ছেলের আদরে বড় করেছেন। কত স্বপ্ন ছিল! মেয়ে দিয়ে মুখ উজ্জল হবে। সব স্বপ্ন আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। রাজধানীর গ্রীন রোর্ডের আগুনে নিহত সাংবাদিক বৃষ্টি খাতুনে মা বিউটি খাতুন যখন বিলাপ করে এই কথা গুলো বল ছিলেন। তখন তার নিষ্পলক চোখের জল দুই চোয়াল গড়িয়ে বুকের কাপড় ভিজে যাচ্ছিল।

ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তির পর থেকে ঈদের দুই-তিন দিন আগে বাবা সাবলুল আলম সবুজ শেখের সাথে বাড়ি ফিরতেন বৃষ্টি খাতুন। অনেক ঈদে ট্রাকের মাথায় চেপে বাবার সাথে বাড়ি ফিরেছে। এবারও ঈদের তিনদিন আগে বাবার সাথে বৃষ্টির বাড়ি ফেরার কথা ছিল। মেয়ের দাফন করে ঢাকায় চাকুরিতে গেছেন বাবা সবুজ। এখনো ফেরেন নি। ঈদের একদিন বাঁকি থাকলেও নতুন পোশাক, সেমাই চিনি কিছুই কেনা হয়নি। ঈদের কোন আয়োজন নেই এই পরিবারে। ঈদে বৃষ্টির অনুপস্থিতির প্রভাব পরে আশে-পাশের দু’চার দশ পরিবারের উপর।

নিহত মেয়ে বৃষ্টির কবরের পাশে বিলাপ করে মা বিউটি খাতুনের দিন কাটে। কলেজ পড়–য়া মেজে মেয়ে ঝনা আর স্কুল পড়–য়া ছোট মেয়ে বর্ষা মাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। প্রতিবেশীরা কেউ না কেউ সারক্ষনই তাকে সময় দেন। তবুও সুযোগ পেলেই ছুটে যান বাড়ি থেকে ৫০ গজ দূরে মেয়ে কবরের পাশে।

রবিবার তখন দুপুর। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা বেতবাড়িয়া ইউনিয়নে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বনগ্রাম পশ্চিম পাড়ায় নিহত ইডেন ছাত্রী ও সংবাদকর্মী বৃষ্টি খাতুনের বাড়িতে তখন শুনসান নিরবতা। ঈদে বাড়ি ফিরে মেয়ে যে সিঁড়ি দিয়ে নিজের ঘরে ঢুকত সেই সিঁড়ির উপর বসা বিউটি খাতুন। শোকে পাথর বনে যাওয়া তার (বিউটির) দুই চোখ দিয়ে জল ঝড়ছে। এগিয়ে এলেন নিহতের চাচি সুইটি বেগমসহ দুই একজন প্রতিবেশী নারী।

নিহত মেয়ের শোকে অনেকটাই পাথর হয়ে গেছেন মা বিউটি খাতুন। মেয়ে (বৃষ্টি) কখন যেনো এসে পেছন থেকে মা বলে ডেকে উঠে। এই স্বপ্ন নিয়ে তিনি মেয়ের কবরের পাশে ছুটে যান। তিনি বলেন, সব স্বপ্নইতো আগুনে পুড়ে গেছে। আর কী হবে। আর কী ভালো হবে, আর কিসেইবা মন্দ হবে। তার আবার কিসের ঈদ।

সুইটি বেগম বলেন, একটু সুযোগ পেলেই বিউটি খাতুন মেয়ের কবরের কাছে ছুটে চলে যায়। ডুক্কার (চিৎকার) করে কাঁদেন। তাকে ফিরিয়ে আনতে দুই তিনজন মহিলা লাগে। আজও (রবিবার) সকালের দিকে বাড়ির লোকেরা যখন পেঁয়াজ কাটা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তখন সে একবার মেয়ের কবরের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন।

তিনি আরো জানান, বৃষ্টির বাবা সাবলুল আলম সবুজ শেখ ঢাকার একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। মেয়ের কবর দিয়ে যাওয়ার পর একবার এসেছিল। প্রতি ঈদে মেয়ে সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরতেন। এবার হয়তো ঈদের দুই এক বেলা আগে আসতে পারেন। আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে নিন্ম আয়ের প্রতিবেশীরাও তাদের শিশুদের ঈদের নতুন পোশাক কেনার দায়িত্ব দিতেন বৃষ্টি উপর। এবার তার (বৃষ্টির) শুন্যতা শুধু পরিবারের উপর পরেনি। নিন্ম আয়ের প্রতিবেশীদের উপরও পরেছে।

সাবলুল আলম সবুজ শেখের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ কারা হয়। তিনি জানান, এবার তো আর মেয়ে নাই। তাই সব ম্যানেজ করে মঙ্গলবার গ্রামে ফিরবেন। ছোট মেয়েদের ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু তারা জানিয়েছে প্রয়োজন হলে জানাবে।

বৃষ্টির নিকট প্রতিবেশী সাবেক ইউপি সদস্য পান্না’র স্ত্রী রেখা বলেন, বিউটি খাতুন স্বদ আলাপি মানুষ ছিলেন। মেয়ের শোকে পাথর হয়ে গেছেন। কারো সাথে কথা বলতে চায় না। একা থাকে, সুযোগ পেলেই মেয়ের কবরের পাশে ছুটে যান। ধরে আনতে হয়।

উল্লেখ্য, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গ্রীনরোডের রেস্তরায় অগ্নিকান্ডে ইডেন ছাত্রী সাংবাদিক বৃষ্টি খাতুনসহ ৪৬ জন মারা যায়। অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ও বৃষ্টি খাতুন একই ব্যক্তির দুই নাম নিয়ে ধ্রুমজালের সৃষ্টি হয়। অবশেষে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে বৃষ্টি খাতুনের পরিচয় নিশ্চিত হয়। ১১ মার্চ দুপুরে বাবা সাবলুল আলম সবুজের কাছে বৃষ্টির মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। সে রাত্ইে নিজ গ্রাম খোকসার বনগ্রাম পশ্চিম পাড়ায় পারিবারিক কবর স্থানে তার দাফন করা হয়।