কুষ্টিয়ায় অস্থির চালের মোকাম

0
176
Kushtia-Dro-20-p-11
কুষ্টিয়া পৌর বাজারের চালের দোকান

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

দেশের অন্যতম বৃহত্তম কুষ্টিয়ায় চালের মোকাম অস্থির। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। দাম বাড়ার এই লাগাম কিছুতেই টেনে ধরা যাচ্ছে না।

কুষ্টিয়ার খাজানগরে সব ধরনের চালের দাম এক বছরের ব্যবধানে কেজি প্রতি সর্বনিম্ন ৮ থেকে ১৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত রমজান থেকে কয়েক দফায় চালের দাম বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির এ প্রবণতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। মাঝারি থেকে সব ধরণের চালের দাম বেড়ে গেছে।

জেলায় ধানের বাজারের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চালের দাম। মিল মালিকরা বলছেন, ধানের দামের সাথে সমন্বয় করে বাড়ছে চালের দাম।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর জুনে যে চালের কেজি ছিল ৩২ থেকে ৩৩ টাকা, সেই চাল এ বছরে একই সময়ে ৪৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তার বলছে, গত দুই বছরের মধ্যে এবারই চালের বাজার সব থেকে বেশি।

চাল ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমন মৌসুমের আগ পর্যন্ত চালের বাজারে দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বাইরে থেকে সহজেই চাল আমদানি করা যাবে না মনে করে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও আড়ৎদারেরা ধান ও চাল মজুদ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কৃষক, মিলার ও খাদ্য কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নতুন ধান মিলগুলোতে আসার ফলে ঈদের আগ পর্যন্ত মিনিকেট, কাজললতা, বাসমতি, আঠাস ও মোটা জাতের চালের বাজার মিল গেটে ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত কমেছিল। তবে ঈদের পরে চিত্র একেবারে আলাদা।

কুষ্টিয়া চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জানান, মূলত চলতি বছরের মে মাসের ১৫ তারিখের পর থেকে কুষ্টিয়ায় চালের বাজার বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে মিনিকেট চাল মিল গেটেই পাইকারি ৪৯ টাকা কেজি অর্থাৎ ৫০ কেজির বস্তা ২৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাজল লতা এখন ২২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাইব্রিড মোটা চাল আগে যেখানে ৩৪-৩৫ টাকা কেজি ছিল। এখন সেখানে ৩৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাসমতি ২৫ কেজির বস্তা আগে ছিল ১২৮০ টাকা। এখন মিলগেটেই ১৪০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

মিলাররা জানান, গত রমজানের ঈদের আগে কুষ্টিয়ার মিলগুলো পুরোপুরি চালু হলেও নওগাঁ, দিনাজপুরসহ অন্যান্য জেলার মিলগুলো পুরো দমে উৎপাদনে ছিল না। ঈদের পর সব জেলার চালকল মালিকরা পুরো দমে উৎপাদনে গেছে। প্রচুর ধান কিনছে মিল মালিকরা।

ছাঁটাই ও বিপনন কার্যক্রম চলছে জোর গতিতে। একমাস আগে যে ধানের বাজার ছিল তার তুলনায় এখন বাজার অনেক বেশি। সব জাতের ধানের দাম মন প্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে আঠাস, কাজললতা ও মিনিকেট (সরু) জাতের ধানের বাজার এখনও অনেক বেশি। যে ধান গত বছর এই সময়ে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ ছিল এখন তা হাজার টাকায় ঠেকেছে। পাশাপাশি সরু ধান গত বছর এই সময়ে ৮০০-৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও এখন ১১৮০ টাকা মন বিক্রি হচ্ছে।

পৌর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, ঈদের আগের তুলনায় এখন বাজার চড়া। করোনার কারনে বাইরে থেকে চাল আনা সহজ হবে না এমনটা আঁচ করতে পেরে সুযোগ সন্ধানীরা এবার প্রচুর ধান ও চাল কিনে মজুদ করছে। যাতে সময় বুঝে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়।

তিনি বলেন, যে মিনিকেট চাল ঈদের আগে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা ছিল তা এখন ৫২ টাকা, আঠাস ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫-৪৬ টাকা, কাজললতা ৪৭ টাকা কেজি, বাসমতি চাল ৬২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এমনকি যে মোটা চাল ৩০ টাকা ছিল তার দামও বেড়ে গিয়ে এখন ৪০ টাকায় ঠেকেছে।

দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অটো রাইস মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, ধানের বাজারের সাথে সমন্বয় রেখে চালের বাজার বাড়ছে। দেশে আম্ফান ঝড়ে ১৫ ভাগ ধান নষ্ট হলেও বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে অভ্যন্তরীন বাজারে ধান ও চালের সংকট না হলেও দামের হেরফের হবে। কৃষকরা ধানের ভাল দাম পাচ্ছে। দাম আরো বাড়তে পারে। ধানের দাম বাড়লে সামনে চালের দাম আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কুষ্টিয়া চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জানান, ধানের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম বাড়ছে।

আরও পড়ুন

কুষ্টিয়ায় জোড়া গোখড়া সাপসহ ২৬ টি ডিম উদ্ধার