কুষ্টিয়ায় প্রতিকেজি চালের দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা

0
125
rich-kus-dro-10-p7

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে গত এক মাসে সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি ৫-১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এক বছরে কেজি প্রতি সর্বনিন্ম বেড়েছে ৮-১০ থেকে টাকা।

রমজানের ঈদের আগে দাম কিছুটা কমলেও ঈদের পর থেকে কয়েক দফায় লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে চালের দাম। দাম বৃদ্ধির এ প্রবণতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। মোটা ও মাঝারি সব ধরণের চালের দাম বেড়ে গেছে। বেড়েছে চিকন চালের বাজার। ধানের বাজারের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চালের দাম। মিলাররা বলছেন ধানের দামের সাথে সমন্বয় করে বাড়ছে চালের দাম।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর জুনে যে চাল ৩২-৩৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে সেই চাল এবছর (বর্তমান) ৪৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তারা বলছে গত দুই বছরের মধ্যে এবারই চালের বাজার সব থেকে বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমন মৌসুমের আগ পর্যন্ত চালের বাজারে দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে বাইরে দেশে থেকে চাল আমদানি করা দুরহ হবে। আর এ কারনে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও আড়ৎদাররা ধান ও চাল মজুদ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কৃষক ও খাদ্য কর্মকর্তারা বলছেন, রমজানের মধ্যে সারা দেশে বোরো ধান কাটা শুরু হয়। নতুন ধান মিলগুলোতে আসায় চালের বাজার ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ঈদের আগ পর্যন্ত মিনিকেট, কাজললতা, বাসমতি, আঠাস ও মোটা জাতের চালের বাজার কেজিতে মিল গেটে ৩-৪ টাকা পর্যন্ত কমে যায়। তবে ঈদের পরের চিত্র একেবারে আলাদা।

দাদা রাইস মিলের অন্যতম স্বত্ত্বাধিকারি জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, ঈদের আগে কুষ্টিয়ার মিলগুলো পুরোপুরি চালু হলেও নওগাঁ, দিনাজপুরসহ অন্যান্য জেলার মিলগুলো পুরো দমে উৎপাদনে ছিল না। ঈদের পর সব জেলায় পুরো দমে উৎপাদনে গেছে। প্রচুর ধান কিনছে মিল মালিকরা। ছাঁটাই ও বিপনন কার্যক্রম চলছে জোর গতিতে। ঈদের আগে যে ধানের বাজার ছিল তার তুলনায় এখন বাজার অনেক বেশি। সব জাতের ধান মণপ্রতি ২৫০ টাকা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে আঠাস, কাজললতা ও মিনিকেট (সরু) জাতের ধানের বাজার এখন অনেক বেশি। যে ধান গত বছর এই সময়ে ৭০০-৭৫০ টাকা মণ ছিল এখন তা হাজারে ঠেকেছে। পাশাপাশি সরু ধান গত বছর এই সময়ে ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও এখন ১ হাজার ১০০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে।

পৌর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান জানান, ঈদের আগের তুলনায় এখন বাজার চড়া। করোনার কারনে বাইরে থেকে চাল আনা সহজ হবে না এমনটা আঁচ করতে পেরে সুযোগ সন্ধানিরা এবার প্রচুর ধান ও চাল কিনে মজুদ করছে।

তিনি বলেন, যে মিনিকেট চাল ঈদের আগে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা ছিল তা এখন ৫০ টাকা, ৪০ টাকা আঠাস ৪৬ টাকা, কাজললতাও একই দামে বিক্রি হচ্ছে। এমনকি যে মোটা চাল ৩০ টাকা ছিল তার দামও বেড়ে গিয়ে এখন ৪০ টাকায় ঠেকেছে।

খাজানগর মোকামে মিলারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। যার আঁচ ইতিমধ্যে বাজারে পড়েছে। চালের বাজার শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে সর্বত্রই এমন আলোচনা চলছে।

চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অটো রাইস মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, সিন্ডিকেট করে কোন মিলার চাইলেও দাম বাড়াতে পারে না। এখন প্রতিযোগিতার সময়। ধানের বাজারের সাথে সমন্বয় রেখে চালের বাজার বাড়ছে। দেশে আম্ফান ঝড়ে ১৫ ভাগ ধান নষ্ট হলেও বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে অভ্যন্তরীন বাজারে ধান ও চালের সংকট হবে না। তবে দামের হেরফের হবে। কৃষকরা ধানের ভাল দাম পাচ্ছে। দাম আরো বাড়তে পারে। ধানের দাম বাড়লে সামনে চালের দাম আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।