কুষ্টিয়ায় যক্ষা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে

0
120
KUSHTIA-TB-24-P-1

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় যক্ষা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। যক্ষা রোগ নির্মূলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হচ্ছে।

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রতি বছরই যক্ষা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কুষ্টিয়া জেলার ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিগত চার বছরের যক্ষা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৭ সালে জেলায় যক্ষা রোগীর সংখ্যা ছিল ৪১৬৪ জন। পরের বছর ২০১৮ সালে আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫৩৬ জন। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় যক্ষা রোগীর সংখ্যা ৩৭২ জন বেড়েছে। আবার ২০১৯ সালে যক্ষা রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৮৬৮ জন। অর্থাৎ ২০১৮ সালের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৩৩২ জন। তবে গত বছর ২০২০ সালে যক্ষা রোগী সনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৯৯৩ জন।

স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২০ সালে যক্ষা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০১৯ সালের চেয়েও বেশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্য কর্মীদের পক্ষে মাঠ পর্যায় থেকে সঠিক তথ্য তুলে আনা সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের প্রদত্ত তথ্য মতে, কুষ্টিয়া জেলার ৬ টি উপজেলার মধ্যে যক্ষা রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দৌলতপুর উপজেলায়। এর পর কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর, ভেড়ামারা ও কুমারখালী উপজেলায়। আর সব চেয়ে কম যক্ষা রোগীর সংখ্যা হচ্ছে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায়।

পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালে দৌলতপুর উপজেলায় ৯০৭ জন রোগী সনাক্ত হয়। ২০১৮ সালে সনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১০৭১ জন। ২০১৯ সালে ১০৯৩ জন এবং ২০২০ সালে ৮০৩ জন। ২০২০ সালে জেলার মধ্যে সর্বনি¤œ যক্ষা রোগীর সংখ্যা ছিল খোকসা উপজেলায় ২৭৭ জন। যক্ষা রোগী সনাক্তের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে চারটি ফেজ তৈরি করা হয়েছে। ১ম ফেজ জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত, ২য় ফেজ এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত, তৃতীয় ফেজ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এবং ৪র্থ ফেজ অক্টোবর মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। এদিকে চলতি বছরের প্রথম ফেজ অর্থাৎ জানুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত জেলায় যক্ষা রোগী সনাক্তের সংখ্যা প্রায় এক হাজার ছুঁয়েছে। এর মধ্যে দৌলতপুর উপজেলায়ই অক্রান্তের সংখ্যা ২০১ জন।

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মানুষ জনের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে। মানুষ এখন একটু কিছু হলেই চিকিৎসকের কাছে ছুটে আসছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে যক্ষা রোগী সনাক্তের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার হারও বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে অত্যাধুনিক জিন এক্সপার্ট মেশিনের সাহায্যে যক্ষা রোগী সনাক্তের শতভাগ নির্ভুল পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।

তিনি জানান, কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে কুমারখালী এবং খোকসা উপজেলা ছাড়া বাকি চারটি উপজেলাতেই বর্তমানে জিন এক্সপার্ট মেশিনের সাহায্যে যক্ষা রোগ সনাক্ত করা হচ্ছে। যে দুটি উপজেলায় এই মেশিন নেই সেটিও চলতি বছরই চালু করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। কুষ্টিয়া জেলার সদর, মিরপুর, ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলায় ব্যাপক হারে তামাকের চাষাবাদ হয়। সরেজমিন অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য বিভাগের অনেকেই মন্তব্য করেন ব্যাপক হারে তামাক উৎপাদনের কারণে জেলায় যক্ষা রোগীর সংখ্যা প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন বলেন, তামাকের কারণে যক্ষা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন কোন তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে না থাকলেও অনেকেই তামাকের কারণে যক্ষা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন বলে তিনি স্বীকার করেন। কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলার মধ্যে দৌলতপুর উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক থেকে দৌলতপুর উপজেলা সব চেয়ে বড়। ভারত সীমান্তবর্তী এ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তামাকের চাষাবাদ হয়।