খোকসায় আওয়ামী লীগের নেতাকে ধরে নিয়ে পেটানোর অভিযোগ

0
28
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন।

স্টাফ রিপোর্টার

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানকে তুলে নিয়ে দোতলায় আটকে শরীরিক নির্যাতনের পরে কোরআন ছুঁয়ে শপথ করানোর অভিযোগ উঠেছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সদর উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ওই সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান। কর্মী নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা সভাপতি।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শোমসপুর বাজারের পাশের হালিমের ধানের চাতাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনকে মটোরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় ১ ঘন্টা পর আহত অবস্থায় তাকে আবার একই স্থানে রেখে যাওয়া হয়। পরে থানা পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের একাংশ তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি এক পথসভায় বাবুল আকতারের অনুকূলে বক্তব্য রাখার সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন তার বক্তব্যে জেলা আওযামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিনকে প্রতিহত করার ঘোষানা দেন। এ ভাইরাল হওয়ার ক্ষোভ থেকে এ ঘটনা ঘটতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরা সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজ দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন লোক ধাক্কাতে ধাক্কাতে আলমগীর হোসেনকে মোটরসাইকেলে তুলে যাচ্ছে। ৩ মিনিটের এই ভিডিওটি এখন সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২ নম্বর ক্যাবিনে চিকিৎসাধীন আহত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন জানান, সকালে ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে তিনি শোমসপুর বাজারের হালিমের ধানের চাতালে আসেন। কিছু সময় পর বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ভাই ভাতিজারা ৩/৪টি মোটর সাইকেল নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। তারা আলমগীরকে জোর করে মটোরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। তাকে জেলা সভাপতির বাড়ির দোতলার একটি ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জেলা সভপতি নিজে তাকে (আলমগীরকে) শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। এভাবেই চলে ২৫/৩০ মিনিট।

তিনি আরও জানান, এক পর্যায়ে জেলা সভাপতি তার ছোট ভাই আব্দুর রহিমের পক্ষে উপজেলা নির্বাচন করে দেওয়ার প্রতিশ্রæতি হিসাবে কোরআন শরিফ ছুয়ে শপথ করতে বলেন। তিনি রাজি না হওয়া তাকে মারপিট করা হয়। পরে তারা আলমগীরকে আবার ধানের চাতালে রেখে যায়। থানা পুলিশ ও আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় নিজে বাদি হয়ে খোকসা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

তিনি আরো জানান, নৌকা করাই আমার অপরাধ। নিজে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেছেন, হামলা কারীরা নৌকার বিরোধিতা করে জামায়াত নেতাকে জিতিয়েছে। সর্বশেষ এমপি নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রার্থী সেলিম আলতাফ জর্জের পক্ষে কাজ করেছেন কিন্তু প্রতিপক্ষরা নৌকার বিরোধিতা করে হারিয়েছে। তিনি রোজা ছিলেন, এ কথা বলার পরেও তাকে কোরআন শরিফ ছুঁয়ে শপথ করতে বাধ্য করার চেষ্টা করার অভিযোগ করেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল আখতার জানান, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সদর উদ্দিন খানের ভাই রহিম খান চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন। নির্বাচনে তাঁর পে কাজ করতে বলেন সদর উদ্দিন খান। সেটি না মানায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও গোপগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনকে জোর পুর্বক ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান নিজে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। একই সাথে তার ভাই রহিম খানের অনুকুলে উপজেলা চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন করে দেওয়ার শপথ হিসেবে পবিত্র কুরআন শরিফ হাত রেখে কসম করানো হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান এ অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের তফশিল ঘোষনা হয়েছে। এখন কতজন, কতরম গুজব রটাবে। প্রতিপক্ষ যে সময়ের কথা বলছেন সে সময়ে তিনি বাড়ি ছিলেন না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ শাহিনা খাতনম বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের ডান হাত ও একটি পায়ে একটু আঘাতের চিহ্ণ আছে। তাকে ভর্তি রাখা হয়েছে।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননুর যায়েদ বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।