জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ১০৫তম জন্মদিন আজ

0
74
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের-ফাইল ছবি

দ্রোহ অনলাইন ডেস্ক

আজ ১৭ মার্চ রবিবার। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৫তম জন্মদিন।

১৯২০ সালের আজকের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারে তার জন্ম। বাংলাদেশ গভীর শ্রদ্ধা ও অবনত মস্তকে মহামানবকে স্মরণ করবে। কবি ও প্রাবন্ধিক অন্নদাশঙ্কর রায়ের ভাষায়, ‘যতকাল রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার/শেখ মুজিবুর রহমান।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন জাতি ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসাবেও পালন করবে। দিনটি উদযাপিত হবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। এ উপল্েয সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি।

জাতির পিতার জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপন উপল্েয রবিবার সারা দেশে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং শিাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোয় জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপল্েয রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান তারা। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শপথ নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহŸান জানান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমান এবং মা সায়েরা খাতুন। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ছিলেন তৃতীয়। খোকা নামে পরিচিত শিশুটি পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির ত্রাতা ও মুক্তির দিশারি। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দীর্ঘ আত্মত্যাগ এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও মমত্ববোধের কারণে শেখ মুজিবুর রহমান পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালির এক অবিসংবাদিত নেতা, ‘বঙ্গবন্ধু’ এবং ‘জাতির পিতা’।

১৮ বছর বয়সে শেখ ফজিলাতুন নেছাকে (রেণু) বিয়ে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাদের দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল।

ত্যাগ আর সংগ্রামী জীবনের অধিকারী বঙ্গবন্ধু একটি জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়ে বিশ্ব ইতিহাসে নিজের নাম লিপিবদ্ধ করেছেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হিসাবে। তার হাত ধরে এই ভ‚খÐে রচিত হয়েছে বিস্ময়কর ইতিহাস। হাজার বছরের পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে নতুন এক রাষ্ট্র বাংলাদেশ।

বাঙালি পেয়েছে জাতিসত্তার পরিচয় ও অধিকার। তিনি হয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তাই তো লড়াকু বীর বাঙালি জাতির ইতিহাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান চিরদিন স্বর্ণারে লিপিবদ্ধ থাকবে।

গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর ঢাকায় ফিরে নতুন রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা নিয়ে অগ্রসর হন তিনি। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর আরেক সংগ্রামী জীবনের অভিযাত্রা। তিনি সারা জীবন মাটি ও মানুষের অধিকার আদায় এবং কল্যাণের জন্য সংগ্রাম করেছেন।

বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য জীবনের ১৪ বছর পাকিস্তানি কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে বন্দি থেকেছেন, দুইবার ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু আত্মমর্যাদা ও বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের প্রশ্নে কখনো মাথা নত করেননি, পরাজয় মানেননি।

দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু তার সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গঠন করেন। পরের বছর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠিত হলে তরুণ নেতা শেখ মুজিব দলটির যুগ্মসম্পাদক নিযুক্ত হন।

এ সময় তিনি কারাগারে আটক ছিলেন। ১৯৫৩ সালে বঙ্গবন্ধু দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে অসা¤প্রদায়িক চেতনায় ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ দিয়ে দলটির নামকরণ করা হয় ‘আওয়ামী লীগ’।

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকায় ছিলেন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

একই বছর যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাকে। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রæয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন তথা বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন তিনি।

পাকিস্তানের স্বৈরশাসক সামরিক জান্তা জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে তাদের কারাগারে পাঠান। উনসত্তরের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানকে কারামুক্ত করে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সত্তরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হন। বাঙালি এ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের ম্যান্ডেট লাভ করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এ বিজয় মেনে না নেওয়ায় শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন।

বঙ্গবন্ধুর সাহসী, দৃঢ়চেতা, আপসহীন নেতৃত্ব ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে ওঠে শত বছরের নির্যাতিত-নিপীড়িত পরাধীন বাঙালি জাতি। মুক্তির অদম্য স্পৃহায় উদ্বুদ্ধ করে তিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার চূড়ান্ত সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ করে তোলেন।

এরপর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা করেন-‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

বাঙালির মুক্তির ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দিন ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ঘোষণার পর দেশজুড়ে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে ৯ মাসব্যাপী রক্তয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহিদের আত্মদান এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিশ্বমানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু। সদ্যস্বাধীন দেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কাজে আত্মনিয়োগ করেন তিনি।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন এবং জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির ল্েয জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর অল্প কিছুদিনের মধ্যে ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে নিজ বাসভবনে ঘাতকদের হাতে অত্যন্ত নৃশংসভাবে সপরিবারে নিহত হন।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসির রায় ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করা হয়। দÐপ্রাপ্ত আরেক খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হয় ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল। এখনো পলাতক রয়েছে দÐপ্রাপ্ত ১৫ আগস্টের পাঁচ খুনি।

বাংলা, বাঙালি, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। শেখ মুজিব মানেই বাংলাদেশ। মুক্তিকামী মানুষের ¯েøাগানের নাম শেখ মুজিব। তিনি বাঙালির অসীম সাহসিকতার প্রতীক-সমগ্র বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলে বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বারিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচির কথা জানানো হয়।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলে রবিবার সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারাদেশে সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।

এদিকে ১৭ মার্চ সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় নেতারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। একইসঙ্গে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং শিশু সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন তারা।

এদিকে জাতির পিতার জন্মদিন উপলে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়াও সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (৩/৭-এ সেনপাড়া, পবর্তা, মিরপুর-১০)-এ খ্রিস্টান স¤প্রদায়, সকাল ১০টায় সবুজবাগ ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার ও সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ স¤প্রদায় এবং সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু স¤প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছে।

এছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলে আগামী ১৮ মার্চ সোমবার সকাল তেজগাঁওস্থ ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে দলের প্য থেকে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।