সন্ধ্যে হলেই গ্রামের রাস্তায় জ্বলে ওঠে বিদ্যুতের আলো

0
31

স্টাফ রিপোর্টার

তখনো সন্ধে নামেনি। পাশের বাড়ি খাবার পানি আনতে গিয়েছিলেন বৃদ্ধা আনোয়ারা। হঠাৎ তার চোখ আটকে যায়, “রাস্তার কারেন্টের খুটিতে চাঁদের ল্যাহাল (মত) বাত্তির সলোক (আলো)” দেখে। আনায়ারা সেদিন বুঝতে পারেনি “শহরের মত গ্রামের রাস্তায় কিডা ঝকঝকে কারেন্টের বাত্তি দিলো।”

স্বাধীনতার কয়েক বছর পর আনোয়ারা এ গাঁয়ে বউ হয়ে এসছিলেন, তখন পদ্মা নদীর অববাহিকার এই গ্রাম গুলোর মানুষ জমির আইল দিয়ে হাট-বাজারে যেতো। রাস্তা ছিল না। পাকা রাস্তা হয়ে গেলো। বিদ্যুত এসেছে। এবার ছেলেদের কল্যানে গ্রামের প্রতিটি রাস্তা অলি-গলীতে বিদ্যুতের আলো জ্বলে উঠলো। এ সবই তার কাছে স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে পদ্মা নদীর কোল ঘেসে আমবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আমবাড়িয়া গ্রাম। অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পরা পদ্মা তীরের বৃহৎ জনগোষ্টির আর্র্থ-সামাজিক উন্নয়নে এগিয়ে এসেছে স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০০৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সংগঠন “ইচ্ছা”র কর্ণধরেরা। ইতোমধ্যে এই সংগঠনের উদ্যোগে গ্রামটির প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গ্রামীন সড়কে বিদ্যুতের বাতি জ্বলতে শুরু করেছে।

বুধবার সন্ধ্যায় সরেজমিন আমবাড়িয়া গ্রাম ঘুরে দেখা য়ায়, উপজেলা সদরের সাথে যোগযোগের প্রধান রাস্তার পাশদিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের অধিকাংশ খুটিতে আলো জ্বলে উঠেছে। পশ্চিম পাড়ার মসজিদে মাগরিবের নামাজে যাচ্ছিলেন বৃদ্ধ আফতাব প্রামানিক। তিনি বলেন “রাস্তায় কারেনের (কারেন্ট) বাত্তি দিয়ে রাত বি রাত বেড়ানের সুবিদে হয়চে। এখন চোর চুটকাও কমবিনি।” গ্রামের ছেলেদের উদ্যোগে গ্রামের রাস্তার খুটিতে খুটিতে বিদ্যুতের আলো দেখে খুশি হয়েছেন তারমত অনেকেই।

ঘরের কোণে বিদ্যুতের লাইট পাওয়াই নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন ৯ম শ্রেণির ছাত্রী জুলি, ৮ম শ্রেণির ছাত্রী আইরিন, কুষক কামাল। গ্রামের রাস্তা ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকায় সন্ধ্যা নামলেই তারা দরজা জানালা বন্দ করে বাড়ি থাকতো। সপ্তাহ আগে তাদের পাড়ায় আলো লাগানো হয়েছে।

সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ইচ্ছা’র এক কর্ণধর আসলাম বিশ্বাস। তিনি পেশায় নির্মান মিস্ত্রী। তিনি জানান, সংগঠনটি দুস্থ অসহায় রোগীদের চিকিৎসা, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়ক কর্মসূচি বাস্তবায়ন, গ্রামের দরিদ্র ও পিছিয়ে পরা মানুষদের নিয়ে তারা কাজ করে চলেছেন। তারা প্রায় ১৬ বছর ধরে সামাজিক আন্দোলনে অবদান রেখে চলেছেন বলে দাবি করেন।

তিনি আরও বলেন, গ্রামকে আলোকিত করতে তাদের এবারের এই প্রকল্পটি ব্যয়বহুল। প্রবাসী ও দেশে ভিতরে কর্মরত সদস্যদের অনুদানে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। তারা গ্রামবাসীর সাথে আলাপ আলোচনা করে তাদের মতামদের ভিত্তিতে বিদ্যুতের খুটির কাছে যার বাড়ি সে বিদ্যুত দেবে এই শর্তে কাজ করে চলেছেন। বিদ্যুত দেওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউই বাদসাধেনি। পরবর্তীতে বাতি ও সংযোগ মেরামত করবে সংগঠন।

প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা সংগঠনটির সদস্য সোহান জানান, গ্রাম জুড়ে পল্লী বিদ্যুত সমিতির বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনের প্রায় ১০২টি খুটি রয়েছে। জনবসতি ও জনগুরুত্বপূর্ণ ৯০টি স্থানে বিদ্যুতের খুটিতে বৈদতিক ভাল্প দেওয়া হবে। গত দুই সপ্তাহে তারা প্রায় ৫৬ টি স্থানে আলোর সংযোগ দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তাদের শতভাগ কাজ শেষ হবে। প্রতি আলো পেছনে একটি করে সেন্সর সুইচ লাগানো আছে। যাতে আলো গুলো সংক্রিয় ভাবে জ্বলতে ও নিভতে পারে।