সালিশে গলায় বস্ত্র নিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হল গৃহবধূসহ পরিবার

0
32
প্রতিকী ছবি

স্টাফ রিপোর্টার

গরু জবাই করেছে দালালরা। তারা মাংশ বিক্রি করে চলেও গেছে। কিন্তু সমাজপতিদের চাপে ঘরের বউ দিনমুজুর ছেলেসহ পরিবারের লোকদের প্রকাশ্য সালিশে গলায় বস্ত্র নিয়ে ক্ষমা চাইতে হলো। এরপর আবার ব্রাহ্মণ নির্দ্ধারণ করবেন ধর্মীয় বিধান মাফিক দন্ড। গরুর মৃত্যুতে আর্থিক ও সমাজিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ছেলের মুখের দিকে তাকাতে পারছে না সাবেক ইউপি সদস্য শিশির সরকার। আবার সমাজের ভয় কাজ করছে তার মধ্যে।

জানা গেছে, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জানিপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দশকাহুনিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য শিশির সরকারের ছেলে দিনমুজুর শিপু সরকার। গত সপ্তাহে দালালের মাধ্যমে ৯৬ হাজার টাকা দিয়ে একটি ষাঁড় গরু খরিদ করেন। উদ্দেশ্য ছিল মোটাতাজা করে কোরবানির ঈদের আগে বিক্রি করবে। কিন্তু বাড়িতে আনার তিন দিনের মাথায় গরুটি অসুস্থ হয়ে পরে। এক পর্যায়ে দালালদের ডেকে গরুটি ফেরৎ দেওয়া হয়। দালালরা ওই দিনমুজুর শিপু সরকারের বাড়ির গোয়াল ঘরে অসুস্থ গরুটি জবাই করে মাংশ বিক্রি করে চলে যায়।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সমাজপতিরা ওই দিনমুজুর সনাতান ধর্মের বিধান লঙ্ঘন করে গো-হত্যা করেছে অভিযোগ তুলে সামাজিক ভাবে তার পরিবারকে বয়কোটের ঘোষনা দেয়।

এ খবরে দিশেহারা সাবেক ইউপি সদস্য শিশির সরকারের পরিবার। বাধ্য হয়ে সমাজপতিদের বাড়ি বাড়ি ধর্নাদিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়। তাতে ক্ষো মেটেনা সমাজপতিদের। এক পর্যায়ে শনিবার দুপুরে ভুক্তভোগী দিনমুজুরের বাবা শিশির এর বাড়িতে বিশাল সালিশ বসায় সমাজপতিরা। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এ সালিশ।

স্থানীয় শৈলডাঙ্গী মহাশ্মশানে কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিরাপদ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে দিনমুজুর শিপু সরকারের স্ত্রী (অঞ্জনা সরকার) ও তার শ্বশুরকে গলায় বস্ত্র নিয়ে সমাজ পতিদের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। একই সাথে একজন ব্রাহ্মণের নির্দ্ধারণ করা বিধান মাফিক দন্ড করার রায় ঘোষনা করা হয়।

প্রকাশ্য মজলিশে ওই গৃহবধূ সহ পরিবারের সদস্যরা ক্ষমা চেয়ে নেন। এ ছাড়া ধর্মীয় বিধান রক্ষায় ব্র‏াহ্মণের পরামর্শ নেওয়ার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে গো-হত্যায় ধর্মীয় দন্ড নির্দ্ধারণ করে তা বাস্তবায়ন করবে।

সালিশের পর শিশির সরকারের সাথে ফোনে কথা বলা হয়। তিনি নিজের মনের কষ্টের কথা জানান এ প্রতিবেদকে। তিনি বলেন, একদিকে ছেলের লাখ টাকার গরু মারা গেলো। অন্য দিকে আবার সমাজ রক্ষার কথা বলে তার গোটা পরিবারকে বিপদে ফেলা হয়েছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ ছেলের মুখের দিকে তাকাতে পারছেন।

কথিত সামাজিক সালিশের সভপতি ও শৈলডাঙ্গী মহাশশ্মানের সাধারণ সম্পাদক নিরাপদ বিশ্বাসের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় কিন্তু তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে ব্রাহ্মণের সাথে পরামর্শের দায়িত্বে থাকা কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, ভুল টা করেছে দালালরা। এর খেসারত দিতে হবে গোটা সমাজের লোকের।