খোকসায় নিহত ভ্যান চালকের পরিচয় মিলেছে

0
99
নিহত ভ্যান চালক নাসিরুল শাহ স্ত্রী তানিয়া।

পুলিশের সংবাদ সম্মেলনঃ ডাকাতি ও হত্যার আসামী আটক

স্টাফ রিপোর্টার

গড়াই নদীর শহর রক্ষা বাঁধ থেকে উদ্ধার করা রক্তাক্ত ভ্যান চালকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। সপ্তাহ ব্যবধানে একাধিক ডাকাতি ও খুনের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে ডাকাতি ও খুনের আসামী আটক ও মালামাল উদ্ধারের কথা জানানো হয়েছে।

সোমবার দিনগত গভীর রাতে খোকসা পৌর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডের গড়াই নদীর শহর রক্ষাবাঁধ থেকে উদ্ধার হওয়া ভ্যান চালকের পরিচয় নিশ্চিত করেছে তার পরিবার। তার নাম নাসিরুল শাহ (২৩)। তিনি জানিপুর পুরাতন বাজার এলাকার আব্দুল খালেক শাহ’র ছেলে। তিনি বিল্ডিং এর পাইলিং কাজের মিস্ত্রী। অবসর সময়ে ভ্যান চালাতেন। তার চার বছরের একটি পুত্র সন্তান ও স্ত্রী রয়েছে।

সপ্তাহ ব্যবধানে গড়াই নদীর দ্বিপচর থেকে হাত বাঁধা জবাই করে হত্যা করা দুটি মৃতদেহ একই জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয়। তাৎক্ষনিক ভাবে মৃত ব্যক্তিদের পরিচয় সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। প্রথম হত্যাকান্ডের স্থান থেকে ১০০ মিটার ভাটিতে সোমবার রাতে শহর রক্ষা বাঁধের উপর ভ্যান চালককে শ্বাসরোধ করে ও মাথা থেতলে হত্যা করা হয়। রাতেই পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে।

সম্প্রতি থানা থেকে ৩০০ গজের মধ্যে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতিসহ ৩ মাসের ব্যবধানে ৭টির বেশী ডাকাতির ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। সন্ধার আঁধার নামার সাথে সাথে প্রধান বাজারসহ উপজেলা সর্বত্র দোকান পাট বন্ধ করে দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। নিজেদের জানমাল রক্ষায় গ্রামবাসীরা রাত জেগে গ্রাম পাহারা দিতে শুরু করেছে।

পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে হাজির করা ডাকাত দলের ৫ সদস্য।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পুলিশ লাইনন্সে সংবাদ সম্মেলন করে সম্প্রতি ঘটা ডাকাতি ও হত্যা মামলার কয়েকজন আসামীকে আটকসহ প্রচুর মালামাল উদ্ধার কথা জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উদ্ধার হওয়া জিনিস পত্রের মধ্যে সিটি গোল্ডের অলংকার, সিগারেট ও ল্যাবটপ প্রদশন করা হয়। এ ছাড়া ডাকাত দলের সদস্য খোকসার ওসমানপুর ইউনিয়নের আব্দুল মজিদের ছেলে সাহস, একই গ্রামের জাহিদুলের ছেলে রয়েল, জানিপুর ইউনিয়নের দুলাল প্রামানিকের ছেলে শুকাই, পাংশা থানার বসা গ্রামের মতিয়ার ও শান্ত মন্ডলকে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করা হয়। তাদের আদালতের মাধ্যমে রিমান্ড নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।।

চরে এক কিলোমিটারের মধ্যে বাবার হত্যাকান্ডের ঘটনার পর ওসমানপুর ইউনিয়নের খানপুর ও মোড়াগাছা দ্বিপচর, খোকসা ইউনিয়নের হেলালপুর ও মোড়াগাছ হেলিপ্যাডের আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাস কারী প্রায় ৩ শতাধিক পরিবারসহ নদী তীরের কয়েক হাজার বাসিন্দারেরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

মঙ্গলবার সকালে গড়াই নদীর দ্বিপচর এলাকায় সরজমিন গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রধান মন্ত্রীর বিশেষ অনুদানের হেলিপ্যাডের আশ্রয়ন প্রকল্পে ৩৮টি পরিবারের জন্য ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এই হত্যা কান্ডের পর আত্মভয়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের ১০ জন বসতি ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।

নিহত ভ্যান চালক নসিরুলের মা নাছিমা খাতুন জানান, রাত ৮টার দিকে একটা ফোন আসে। ফোন পেয়ে কালীবাড়ি এলাকায় ভাড়ায় যাওয়ার কথা বলে সে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। রাতে বাড়ি ফেরেনি। অনেক বার ফোনে কল করা হয় কিন্তু ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

তিনি আরো জানান, সকালে নাসিরুলের বাবা চাউলকলে কাজে বের হন। পথে ভ্যান চালকের কাছে আর এক ভ্যান চালকের মৃতদেহ উদ্ধারের খবর শুনে থানায় যান। সেখানে গিয়ে নিজের ছেলেন মৃতদেহ দেখতে পান।

নিহত ভ্যান চালকের স্ত্রী এক পুত্র সন্তানের মা তানিয়া বেগম স্বামীর হত্যা কারীদের বিচারের দাবিতে বিলাপ করছে। মাঝে মাঝে সজ্ঞা হারিয়ে যাচ্ছে।

দ্বিপচর গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আব্দুস ছাত্তার জানান, শুধু হেলিপ্যাডের আশ্রয়নের মানুষ নয়। সব আশ্রয়ন থেকে মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে। একই চরে সপ্তাহ ব্যবধানে দুটি মৃতদেহ উদ্ধার হলো কিন্তু পরিচয় বা হত্যার কারণ জানা গেলো। এ নিয়ে চরের দুই পারের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে।

খোকসা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বর নাছিম হোসেন জানান, তার পাশের ওয়ার্ডে ধারা বাহিক হত্যাকান্ডে পর থেকে সন্ধ্যা হলেই মানুষ বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। সবাই নিজেকে “সেভে” রাখার চেষ্টা করছেন। কয়েকদিন আগে থেকে তার গ্রামে ভিলেজ ডিফেন্স পাটি করে পালাক্রমে পাহাড়া দেওয়া হচ্ছে।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা হাবিবুল্লাহ জানান, ডাকাতি ও হত্যা মামলার আসামীদের সনাক্ত ও আটক করা হয়েছে। গড়াই নদী থেকে উদ্ধার করা অজ্ঞাত পরিচয়ের দু’জন ডাকাতির ঘটনায় জড়িত। নিজেরাই এ হত্যা কান্ড ঘটিয়েছে বলে আটকরা স্বীকার উক্তি দিয়েছে। আটকদের রিমান্ডের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।