উপার্জনের একমাত্র ভ্যান হারিয়ে দিশেহারা লতিফ

0
65

কুমারখালী প্রতিনিধি

আমার তো ব্যাটাপুত (ছেলে) নাই। সংসারে স্বামী পরিতক্তা মেয়ে আছে। একটা নাতি ছোয়াল আছে। একটা ভ্যান ছিল স্বামী কাটকুট করে চালাতেন। ভ্যানডাও চুরি হয়া গেছে। আমার এখন চলার মত কোনো পরিস্থিতি নাই। এখন আমরা কিভাবে চলব?

দু’চোখের জল ছেড়ে দিয়ে কথা গুলো বলছিলেন মোছা. রোকেয়া খাতুন (৫৫)। তিনি কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের ভ্যানচালক মো. লুৎফর রহমান লতিফের (৮৪) স্ত্রী। গত শুক্রবার রাতে তাদের সংসারের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি চুরি হয়ে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এই বৃদ্ধ দম্পতি।

জানা গেছে, জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী লুৎফর রহমান লতিফের বয়স ৮৪ বছর। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন তিনি। এই বয়সে অন্য আট – দশজনের মতো আরাম – আয়েশে বিশ্রাম নিয়ে দিনপাত করার কথা লতিফের। কিন্তু ছেলে সন্তান না থাকায় বয়সের ভার মাথায় নিয়ে ভ্যান চালিয়ে চারজনের সংসার চালাতেন তিনি। কিন্তু গত শুক্রবার রাতের কোনো এক সময় নিজবাড়ি থেকে তার ভ্যানটি চুরি হয়েছে। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তিনি ভ্যানের সন্ধান পাননি। পরে গত শনিবার তিনি কুমারখালী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

আরো জানা গেছে, জরাজীর্ণ চারচালা দুই কক্ষ বিশিষ্ট্য টিনশেড ঘরে স্ত্রী, স্বামী পরিত্যাক্ত, নাতিসহ চারজনের বসবাস লতিফের। ঘরের চালা ও বেড়ার টিন ছেঁড়াফাটা। নেই দরজা – জানালাও। প্রায় আট বছর আগে বিভিন্ন জনের সহযোগীতায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা দিয়ে উপার্জনের একমাত্র ভ্যানটি ক্রয় করেছিলেন তিনি। ভ্যানটি হারিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে আয়। খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের।

রবিবার (১২ মে) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চৌচালা টিনশেড ঘরের চালা ও বেড়ায় অসংখ্য ছিদ্র। একটি কক্ষে নেই দরজা – জানালা। ঘরের সামনে ভ্যানরাখার স্থান করা হয়েছে। সেখানে নেই সেই ভ্যানটি। তবে চার্জারটি পড়ে আছে। আর ঘরের বারান্দায় বসে আছেন স্বামী – স্ত্রী। তাদের চোখে – মুখে দুঃখ – দুর্দশা আর হতাশার ছাপ।

এসময় ভ্যানচালক লুৎফর রহমান লতিফ জানান, সেদিন ফজরের নামাজ পড়তে উঠে দেখি আয়ের একমাত্র উৎস্য ভ্যানটি নেই। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ভ্যান না পেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।

তাঁর ভাষ্য, বয়স হয়েছে। তবুও ছেলে না থাকায় ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান তিনি। সেই ভ্যানটিও হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে তাদের। একটা ভ্যান কেনার জন্য সকলের সহযোগীতা প্রত্যাশা করেছেন তিনি।

জানতে চাইলে প্রতিবেশী মো. সাহেব আলী জানান, এলাকার সবচেয়ে গরীব ও অসহায় মানুষ লতিফ। ভ্যানটি হারিয়ে পরিবার নিয়ে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছেন। তিনি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগীতা কামনা করেছেন।

যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান দুঃখ প্রকাশ করে জানান, ভ্যানচালক লতিফ খুবই অসহায়। জীবিকার্জনের তাগিদে তিনি এই বয়সেও ভ্যান চালান। কিন্তু ভ্যানটি চুরি হওয়ায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে পরিবারটি। তিনিও বিত্তবানদের সহযোগীতা কামনা করেছেন।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আকিবুল ইসলাম জানান, তিনি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। ভ্যানটি উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।