কুমারখালী প্রতিনিধি
কুমারখালীর যদুবয়রা ইউনিয়নের চৌরঙ্গী এলাকার মহিরুদ্দিন শেখের ছেলে বারেক আলী। তিনি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। এবারই প্রথম তার একাউন্টে ২৮ মে ১০ হাজার ২০০ টাকা ঢুকেছিল। পরের দিন বাজারের নগদ এজেন্ট ব্যবসায়ির কাছে টাকা উত্তোলন করতে গেলে জানতে পারেন টাকা নেই ! সেদিন তিনি কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে এসেছেন শূণ্য হাতে।
সমাজসেবা অফিসেও গিয়েছিলেন তিনি, লাভ হয়নি। তবে এ বিষয়ে কেউই থানায় যেতে চান না।
শুধু একজন বারেক আলী নয়, কুমারখালী উপজেলায় কয়েক শত প্রতিবন্ধী, বিধবা, বয়স্ক ও শিক্ষা ভাতাভোগীদের মোবাইল থেকে টাকা গায়েব হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এ ব্যাপারে অনেক ভাতাভোগী উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তাদের কিছুই করার রনই বলে জানান উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোহাম্মদ আলী।
তিনিজানান, ভাতা ভোগীদের টাকার প্লেরোল দেওয়ার আগে এবং পরে একটি প্রতারক চক্র বিভিন্ন সময়ে ভাতাভোগীদের ফোন করে কৌশলে তাঁদের নগদ অ্যাকাউন্টের ওটিপি ও পিন নাম্বার জেনে নিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ বিষয়ে সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সব সময়ই ভাতা ভোগীদের সতর্ক ও সচেতন কর হয়। তবুও অনেকে ভুলক্রমে গোপনীয় তথ্য প্রতারকদের দিয়ে দেন। তবে প্রতাকরা অনেক সময় সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও মাঠ কর্মচারীদের নাম পরিচয় দিয়েও গোপন তথ্য চেয়ে থাকেন।
উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, কুমারখালীতে প্রায় ২৫ হাজার প্রতিবন্ধী, বিধবা, বয়স্ক ও শিক্ষা বিষয়ক ভাতাভোগী রয়েছে। প্রতি তিনমাস অন্তর অন্তর প্রতিটি ভাতাভোগীদের অ্যাকাউন্টে সরকারিভাবে টাকা পাঠানো হয়। প্রতিবন্ধী অ্যাকাউন্টে প্রতিমাসে ৮৫০ টাকা, বিধবা অ্যাকাউন্টে প্রতিমাসে ৫৫০ টাকা, বয়স্ক অ্যাকাউন্টে ৬০০ টাকা, প্রাথমিক শিক্ষা ভাতার অ্যাকাউন্টে প্রতিমাসে ৯০০ টাকা, মাধ্যমিক পর্যায়ে এক হাজার টাকা এবং কলেজ পর্যায়ের শিক্ষা ভাতার অ্যাকাউন্টে প্রতিমাসে এক হাজার ২০০ টাকা পাঠানো হয়।
২০২০ সাল পর্যন্ত সরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের নিজ নিজ হিসাব নম্বরে টাকা পাঠানো হতো ভাতাভোগীদের। সেময় ভাতাভোগীরা ব্যাংকে এসে টাকা তুলতে নানান ভোগান্তি পোহাতেন। ২০২১ সাল থেকে ভাতাভোগীদের টাকা মোবাইল ব্যাংকিং নগদ অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। আর নগদে আসার পর থেকেই ভাতাভোগীরা প্রতারণার শিকার হয়ে আসছেন। প্রায় ১০ দিন পূর্ব থেকে চলতি কিস্তির টাকা যাওয়া শুরু হয়েছে ভাতাভোগীদের নগদ অ্যাকাউন্টে। নতুন প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীদের অ্যাকাউন্টে ১২ মাসের ১০ হাজার ২০০ টাকা করে পাঠানো হয়েছে।
ভাতাভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি তিনমাস অন্তর মোবাইলে ভাতার টাকা ঢুকে। টাকার ঢুকার কয়েকদিন আগে থেকেই সমাজসেবা কর্মকর্তা – কর্মচারীদের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন মানুষ ফোন দেয় এবং পিন নাম্বার, ওটিপি নাম্বারসহ নানান তথ্য চাই। অনেকেই বুঝতে না পেরে তথ্য দিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
জানা গেছে, প্রতারক চক্রের সঙ্গে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা – কর্মচারীদের জড়িত থাকার সন্দেহে গত মঙ্গলবার সকালে উপজেলার কয়া এলাকায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন প্রতিবন্ধী ফেডারেশনের কতিপয় ভাতাভোগীরা। ওইদিন কর্মসূচি শেষে তাঁরা জেলা প্রশাসকের নিকট কর্মকর্তা – কর্মচারীদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
প্রতিবন্ধী ফেডারেশনের সভাপতি নওশের আলী বলেন, নগদ এ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার পর থেকে তাদর সদস্যরা বেশী প্রতারিত হচ্ছে। তিনি এই প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কতৃপক্ষের আহবান জানান।
জানতে চাইলে কুমারখালী উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবীব চৌহান জানান, প্রযুক্তি ব্যবহার করে, না-কি সরাসরি ফোন করে গোপন তথ্য জেনে নিয়ে ভাতা ভোগীদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে? এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে আগে পুলিশের সহায়তা নেওয়া দরকার। এই হতদরিদ্র মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারকদের খুঁজে করা পুলিশের পক্ষেই সম্ভব। সেই সাথে ভাতা ভোগীদের সচেতনতাও বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
কুষ্টিয়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ আব্দুল লতিফ শেখ জানান, হ্যাকারদের বিষয়ে তাঁরা সব সময় ভাতাভোগীদের সচেতন করে আসছেন। সমস্যা নিরোসনে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করছেন তিনি।