খোকসার স্কুলছাত্র মাহিম মৃত্যুর কাছে হেরে গেলো

0
64

স্টাফ রিপোর্টার

মা ফুপুর অনুমতিতেই শহীদদের ডাকে সারা দিয়ে মিছিলে গিয়ে পুলিশের টিয়ারশেলের ধোয়ায় আক্রান্ত দশম শ্রেণির ছাত্র মাহিম হোসেন অবশেষে মারা গেছে।

খোকসা উপজেলার বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের বামন পাড়া গ্রামের ইব্রাহীম হোসেনের বড় ছেলে স্কুল ছাত্র মাহিম হোসেন (১৭)। পড়তো চাঁদট গ্রামের ইয়াকুব আহমদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণিতে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী। মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে রক্ত বমি আর শ্বাস কষ্টে মারা যায় সে। এদিন বিকালে গ্রামের বাড়িতে তার দাফন করা হয়।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকে গ্রামের ছেলেদের সাথে কাজ শুরু করে মাহিম। আন্দোলনের চুড়ান্ত পর্যাযে এসে ছোট ফুপু রহিমার উৎসাহে ৪ আগষ্ট মিছিলে যোগ দিতে উপজেলা সদরে যায়। কিন্তু সেখানে পুলিশের বাধার মুখে সঙ্গীদের ছেড়ে কুষ্টিযার উদ্দেশ্যে বাসে ওঠে। পাশের উপজেলা কুমারখালীতে গিয়ে বাস থেকে নেমে আন্দোলনকারীদের সাথে যোগ দিয়ে পুলিশের তোপের মুখে পরে। মুহুমহু কাঁদানি গ্যাসের মধ্যে পরে মাহিম। স্থানীয় মহিলারা তাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে সহায়তা করে। বাড়ি ফিরে মাহিম আর স্বাভাবিক হতে পারেনি। তার মুখে ও শরীরে জ্বালা যন্ত্রনা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে শনিবার সকাল থেকে প্রচন্ড জ্বর ও শ্বাস কষ্টে আক্রান্ত হয় সে। গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে চিকিৎসাও নেয়। সোমবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে কুষ্টিযা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

মঙ্গলবার বিকালে মাহিমের গ্রামের বাড়ি তার মরদেহ পৌছায়। নিহতের বাড়িতে গ্রামের অসংখ্য নারী-পুরুষ ও আন্দোলনের সহকর্মী এবং সহপাঠিরা ভিড় করে। ইয়াকুব আহমদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাযার নামাজের পর চাঁদট কবর স্থানে তার দাফন করা হয়।

আরও পড়ুন – শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরা পুলিশ বরখাস্ত হলেন

নিহত মাহিমের গ্রামের সহযোদ্ধা জুয়েল ও রফিক জানান, আন্দেলনের শুরু থেকে মাহিম তাদের গ্রæপে ছিল। অন্য ছেলেদের মত সেও বাড়িতে না জানিয়ে জেলা ও থানা সদরের কর্মসূচিতে অংশ নিত। সহকর্মীর মৃত্যুতে তারাও ব্যথা পেয়েছে।

নিহত মাহিমের ফুপু রহিমা বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, দেশ স্বাধীন করতে শহীদ ভাইদের ডাকে তার সোনা মিছিলে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে তাকে সব ঘটনা জানিয়েছিল। কিন্তু এতটা অসুস্থ তা বুঝতে দেয়নি।

মাহিমের মা রেহানা খাতুন পুত্র শোকে মুছরে পরেছেন। ঘরে তার বিছানা ঘিরে গ্রামের মহিলারা ভিড় করেছে। মাঝে মাঝে তিনি বিলাপ করছেন। ছেলে (মাহিম) গ্যাসে আক্রান্ত হয়েছিল তা বলেছিল। কিন্তু এতো বেশী অসুস্থ তা বুঝতে দেয়নি।

নিহতের বাবা ইব্রাহিম হোসেন জানান, গ্রামের ছেলেদের সাথে তার ছেলে আন্দোলন করেছে। উপজেলা সমন্বয়করা তার সাথে ছিলো। তাদের সাথে আলোচনা করে মামলা ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন।