কুমারখালীতে কবর দোকানসহ জমি দখলের অভিযোগ

0
34

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

রাজনৈতিক মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা কারাগারে। প্রতিপক্ষের ওপর হামলা ও লুটপাট মামলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ওই নেতার কর্মী, সমর্থক ও স্বজনরা। সেই সুযোগে চারটি দোকান ও তাদের দাদার কবরটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। কাটা হয়েছে বেশকিছু গাছপালাও। সেখানে তোলা হয়েছে দেওয়ালও। এখন ভাঙা দোকানের ইট গুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

বুধবার (২০ নভেম্বর) সকালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কল্যাণপুর বাজার এলাকায় সরেজমিন গিয়ে এমন চিত্র ে দেখা যায়। আবার কল্যাণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক বিঘা জমির চারিদিকে বাঁশের চিকন খুঁটিতে বাঁধা লাল পতাকা। গ্রামটি উপজেলা শিলাইদহ ইউনিয়নে অবস্থিত।

এসময় ভুক্তভোগী শিলাইদহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজেদুর রহমান বলেন, আমাদের সমাজপ্রধান ও আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদ কারাগারে। সেই সুযোগে বিএনপির ছত্রছায়ায় গ্রাম্য প্রতিপক্ষের আশরাফ সিদ্দিক, আদনান হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান, হানিফ মেম্বর, কুরমান আলী ও তাদের সমর্থকরা আমাদের চারটি দোকান ও দাদা -দাদীর কবর ভেঙে দিয়েছে। দোকানের পাশের বাগানের মেহগুনি গাছ গুলো কেটে নিয়েছে। এখন ইটের দেওয়াল দিয়ে ঘিরে নিচ্ছে। আবার মাঠের জমিতেও লাল পতাকা টাঙিয়ে দখল করে নিছে।’

তার ভাষ্য, আদালতে রেকোর্ড সংশোধনী ও ভাগ – বাটোয়ারা মামলা চলছে। মামলায় আদালত ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। কিন্তু প্রতিপক্ষরা আদালতের আদেশ অমান্য করে জবর দখল করে নিয়েছে।

এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা জানায়, প্রায় ১০০ বছর ধরে কল্যাণপুর মৌজায় কয়েকটা খতিয়ানে প্রায় ২০৭ শতাংশ জমি ভোগদখল করে আসছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত গ্রাম্য মাতব্বর আজাদুর রহমান আজাদ, তার ভাই ও আওয়ামী লীগ নেতা মাজেদুর রহমান, আরেক চাচাতো ভাই তমিজুর রহমান ও তাদের স্বজনরা তবে উক্ত জমি এস, এ ও আর, এস খতিয়ানে প্রতিবেশী মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে আশরাফ সিদ্দিক (৬১) ও তাদের গংয়ের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। জমি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে ২০০৭ সালে আদালতে রেকর্ড সংশোধনে দেওয়ানী মামলা করেন আশরাফ সিদ্দিক গং।
এরপর আদালতে মামলাটি চলমান থাকলেও ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর আশরাফ সিদ্দিক গং উক্ত জমি দখল নিতে আসলে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। ঘটনার পরদিন প্রতিপক্ষের তমিজুর রহমান কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধিতে একটি মামলা করেন। পরে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর দুই দশমিক ৭০ একর (২০৭ শতাংশ) জমির ওপর ১৪৪ ধারা জারি করেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। জারিতে বলা হয়েছে, ‘দেওয়ানি মামলা নম্বর ৩২১/০৭ চলমান থাকায় মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উভয়পক্ষকে নিজ নিজ দখলে থাকার আদেশ দেওয়া হল। ‘ এতোদিন উভয়পক্ষ আদালতের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছিল। তবে গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আশরাফ সিদ্দিক গং উক্ত জমি দখলের পায়তারা শুরু করে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বজনদের দোকানে আগুন লাগিয়ে ভাঙচুর করে প্রতিপক্ষরা। গত ১৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ নেতা জিহাদ গং হামলা চালিয়ে প্রতিপক্ষের কয়েকজনকে আহত করে। এঘটনায় থানায় দুইটি মামলা করেন আশরাফ গং। এরপর ২৭ অক্টোবর একটি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন জিহাদ। আর হামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তার সমর্থক ও স্বজনরা।

সেই সুযোগে আদালতের ১৪৪ ধারা অমান্য করে গত ১৪ নভেম্বর থেকে কবরস্থান,কৃষিজমি, গাছের বাগানসহ প্রায় ১২ বিঘা জমি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষ আশরাফ সিদ্দিক গংয়ের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী তমিজুর রহমান বলেন, ‘১০০ বছর ধরে আমিসহ আমার পূর্ব পুরুষরা জমির ভোগদখল করে আসছে। আর সরকার পরিবর্তনের পর প্রতিপক্ষরা আইন অমান্য করে আমাদের জায়গা জমি সব দখল করে নিয়েছে। ভাঙচুর করে দাদা – দাদীর কবরও দখল করে নিয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’

তমিজুরের ৮০ বছর বয়সী ফুফু মাজেদা খাতুন বলেন, ওরা আমার বাবা (মৃত নাদের প্রামাণিক) ও মায়ের কবরসহ দোকানপাট ভেঙে ফেলেছে। আমি এর বিচার চাই।

১৪৪ ধারা অমান্য করে জমি দখল, ভাঙচুর ও গাছ কাটার বিষয়টি স্বীকার করলেও প্রতিপক্ষের অভিযোগ অস্বীকার করেন আশরাফ সিদ্দিক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ১৬ বছর ধরে প্রকৌশলী জিহাদ ও তার সমর্থকরা আমাদের প্রায় ১০ -১২ বিঘা জমি দখল করে রেখেছিল। এখন আওয়ামী লীগ নেই। তাই আমাদের জমি আমরা দখল করে নিয়েছি।

শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবু হানিফ বলেন, জমি – জায়গা নিয়ে দু’পক্ষের দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছে। একাধিকবার বসাবসি করা হয়েছে। তবুও সমাধান হয়নি। আদালতে মামলা চলছে।

আরও পড়ুন – পুলিশের ৩১ কর্মকর্তাকে রদবদল

কুমারখালী থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, জমি সংক্রান্ত বিষয়ে পুলিশের হাত দেওয়ার সুযোগ নেই। পুলিশ এলাকায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে। তার ভাষ্য, এসব জমি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে একাধিকবার হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। থানায় দুইটি মামলা আছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।