নাম বিভ্রাটে দিনমুজুর মাহাবুল আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন

0
49

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

নামের সঙ্গে কিঞ্চিত মিল থাকায় মাদক মামলায় দীর্ঘ ৬ বছর ধরে আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন দিনমজুর মাহাবুল। অথচ মাদক ব্যবসায়ী আসল মাহবুব হোসেন রয়েছে অধরা। এদিকে মামলার খরচ জোগাড় করতে দিনমজুর মাহাবুল নিস্ব হয়ে পড়েছেন।

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মাইলবাড়িয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামে মাহাবুল এর বাড়ি। পেশায় দিনমজুর। তিনি শাহ আলমের ছেলে।

ভুক্তভোগী জানায়, ২০১৮ সালের ৯ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ইশ্বরচন্দ্রপুর এলাকা থেকে ১০০ বোতল ভারতীয় ফেন্সিডিলসহ বিজিবির হাতে আটক হয় মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে শুকুর আলী। এঘটনায় বিজিবির দর্শনা কোম্পানীর হাবিলদার শওকত আলী বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। পুলিশ ওই মামলায় নাটোর জেলার জয়কেষ্টপুর গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে আজবার আলী ও মহেশপুর উপজেলার মাইলবাড়িয়া গ্রামের আলী বক্স ওরফে পচার ছেলে মাদক ব্যবসায়ী মাহাবুব হোসেনকে পলাতক দেখিয়ে চার্জসীট প্রদান করে। ওই মাদক মামলার আসামি মাহাবুবের জায়গায় দিনমজুর মাহাবুলকে ধরে আদালতে চালান দেয় দামুরহুদা থানার এসআই মেজবাহুর রহমান। আসামি শনাক্তে ভুল হওয়ার ব্যাপারে থানা পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দিলে ১৩ দিন জেলখেটে জামিনে মুক্তি পান দিনমজুর মাহাবুল। জামিনে মুক্ত হলেও ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত আদালতে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন মাহাবুল।

নেপা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মাহবুর রহমান জানান, মাদক ব্যবসীয় মাহবুব ও দিনমজুর মাহাবুলের নামের সামান্য মিল থাকলেও তাদের পিতা ও মাতার নাম আলাদা। তিনি অভিযোগ করেন, গ্রেফতারের সময় দিন মজুর মাহাবুলের পরিবার ও এলাকাবাসী পুলিশকে অধিকতর তদন্ত করতে অনুরোধ জানালেও তা শোনেননি দামুড়হুদা থানার এস আই মেজবাহুর রহামান।

ফেন্সিডিলসহ আটক হওয়া শুকুর আলী জামিনে মুক্তি পেয়ে জানিয়েছিলেন, তিনি একজন কামলা হিসেবে ফেন্সিডিল বহন করছিলেন। মাদকের আসল মালিক ছিলো মাইল বাড়িয়া গ্রামের মাহাবুব হোসেন। কিন্তু এ মামলায় মাহাবুল নামে যাকে পুলিশ গ্রেফতার করে তাকে তিনি চিনেন না।

গ্রামবাসি আজিজুর রহমান বলেন, মাহাবুল একজন দিনমজুর। তিনি কোনদিন মাদক ব্যবসার সাথে জরিত ছিলেন না। তিনি বলেন, তাদের গ্রামের চিহ্নিত একজন মাদক ব্যবসায়ী হচ্ছে মাহাবুব। শুধু নামের সামান্য ভুলে একজন নিরীহ দিনমজুরকে এখনো মামলার ঘানি টানতে হচ্ছে।

মাহাবুলের মা তহমিনা খাতুন বলেন, তার ছেলে নিরাপরাধ। প্রতিহিংসা ও মাদক মামলা ধামাচাপা দিতেই কেউ পুলিশকে আসল ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে মাহাবুলকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। তিনি রাষ্ট্রের কাছে বিচার দাবী করেন।

বিষয়টি জানতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দামুড়হুদা থানার এস আই মেজবাহুরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে মহেশপুর থানার ওসি ফয়েজ আহম্মেদ বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তার তো ভুল হওয়ার কথা না। আসামীর নাম এবং পিতার নাম মিল না পেলে তিনি তো গ্রেফতার করতে পারেন না।

আরও পড়ুন – খোকসায় জমির আইল ভাঙা নিয়ে আহত ৭ জন

ঝিনাইদহ জজ আদালতের পিপি এ্যাডঃ এস এম মশিয়ুর রহমান বলেন, নামের ভুলের কারণে নিরাপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা অন্যায়। এমনটি করা হলে মানুষ পুলিশ ও আদালত সম্পর্কে ভুল ম্যাসেজ পাবে। তিনি বলেন, ঝিনাইদহের আদালতে মাহাবুলের মামলাটি হলে তাকে সহায়তরা করা সহজ হতো। কিন্তু মামলাটি চুয়াডাঙ্গা আদালতে হওয়ায় তাকে আইনী সহায়তা দিতে পারছেন না।