কুমারখালীতে শ্রমিকদল ও জাসদ নেতা মিলেমিশে দখলে নিয়েছে একটি মার্কেট

0
59

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে শ্রমিকদল ও জাসদ নেতা মিলেমিশে সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তার মার্কেটের ২২ দোকান দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দখল হয়ে যাওয়া মার্কেটের দোকান গুলোর দাম প্রায় ৬ কোটি টাকা।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর উপজেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান ও উপজেলা জাসদের যুগ্ম সম্পাদক কামাল বিশ্বাস ওই মার্কেটটি দখলে নেন। মার্কেটের একটি ঘরে উপজেলা শ্রমিকদলের কার্যালয় করা হয়েছে। টাঙানো বিএনপি কেন্দ্রিয় নেতাদের ছবি।

ভুক্তভোগী সাবেক সরকারি কর্মকর্তা মোমতাজ আলী শেখ বলেন, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদল নেতা আব্দুল হান্নান আমার দুইটা দোকানঘর দখল করে নেন। পরে মার্কেটের ২২টি দোকানের সবগুলোই তারা দখল করে নেন।

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, কুমারখালী থানায় বারবার অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। পুলিশের ভাষ্য, বারবার নিষেধ করার পরও তারা কোনো কথাই শুনছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে হানিফ মিয়া নামের একজন তার ৪৩ দশমিক ৫০ শতক জমির মধ্যে ৩৩ শতক জমি এওয়াজ (বিনিময়) দলিলে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মাঝগ্রামের মৃত আফসার আলী শেখের ছেলে মোমতাজ আলী শেখের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর সেখানে মোমতাজ আলী ২২টি সেমিপাকা দোকানঘর নির্মাণ করেন। দোকানগুলো থেকে তিনি প্রতিমাসে নিয়মিত ভাড়া উত্তোলন করতেন। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর উপজেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান ও উপজেলা জাসদের যুগ্ম সম্পাদক কামাল বিশ্বাস জোরপূর্বক তার দুটি দোকান দখল করে নেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দখল করা দুটি দোকানের একটিতে বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতাদের ছবি টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। অপরটি ভাড়া দেওয়া। বাকি ২০টি দোকানে মোমতাজের ভাড়াটিয়া থাকলেও জোরপূর্বক ভাড়া উত্তোলন করছেন হান্নান ও কামাল বিশ্বাস।

মাকের্টের ভাড়াটিয়া রুহুল আজম বলেন, ‘২০০৭ সালে দোকানটি মোমতাজের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে তাকেই নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করে আসছিলাম। কয়েকদিন আগে কামাল বিশ্বাস মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দাবি করেন। প্রথমে ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানালেও পরে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। পরে আমরা কামাল বিশ্বাসকে ভাড়া দিয়েছি।’

তবে শ্রমিকদল নেতা হান্নান বিশ্বাসের দাবি, জমিটি ২০০৭ সালে মূল মালিকের কাছ থেকে কিনেছেন কামাল বিশ্বাস। আওয়ামী লীগের সময় প্রশাসন দিয়ে মোমতাজ আলী জমিটি জমি দখল করে নেন। ৫ আগস্টের পর ফেরত নেওয়া হয়েছে। তবে হান্নান এবং কামাল বিশ্বাস এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তাদের কাগজপত্র ও দলিল আদালতে জমা রয়েছে বলে জানান।

মোমতাজ শেখ বলেন, ‘আমার জমি কেনার ২৬ বছর পর কামাল বিশ্বাস একটি জাল দলিল তৈরি করে আদালতে মামলা করেন। ওই জাল দলিল আদালত আটকে দিয়েছেন। আমার পক্ষে আদালত আদেশ দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা আমার জমিটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে আসছেন। পরে আমি কামাল বিশ্বাসের নামে দেওয়ানী মামলা করি। ওই মামলায় আদালত ২২টি দোকানঘরের রক্ষণাবেক্ষণ মেরামত ও ভাড়া বিলের মাধ্যমে বা স্বয়ং দখল ভোগ করার অধিকার আমার পক্ষে আদেশ দেন। কুমারখালী থানার ওসিকে সামগ্রিক বিষয়ে তদারকির জন্য নির্দেশ দেন আদালত। তবে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কুমারখালী থানা পুলিশ।

জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা কুমারখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মারজান বলেন, মোমতাজ শেখের কাগজপত্র সঠিক আছে। আদালতের আদেশও তার পক্ষে। আমি একাধিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দোকানের ভাড়া তুলতে নিষেধ করেছি। কিন্তু তারা কোনো কথাই শুনছেন না।

উপজেলা জাসদের সভাপতি জয়দেব বিশ্বাস বলেন, কামাল বিশ্বাস উপজেলা জাসদের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে দেখছি বিএনপি নেতাদের সঙ্গে চলাফেরা করছেন। বর্তমানে তিনি জাসদের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় নন।

আরও পড়ুন – কুষ্টিয়ায় জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন

এ বিষয়ে উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি কিয়াম বিশ্বাস বলেন, শুনেছি জায়গা নিয়ে মামলা রয়েছে। দখলের বিষয়টি জানি না। আমি ওই অফিসে যাই না, বসিও না।