কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীর (১২) মা মারা গেছেন প্রায় চার বছর আগে। বাবা ঢাকায় দুই টাকা মালের ব্যবসা করেন। সৎ মা তেমন খোঁজ খবর রাখেন না। এ সুযোগে প্রতিবেশী এক যুবক ওই ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণ করে ওই যুবক। সম্প্রতি ওই ছাত্রী অন্তঃসত্ত¡া হলে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সদকী ইউনিয়নের মহিষাখোলা গ্রামে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত যুবক ওই গ্রামের আকের শেখের ছেলে তুষার শেখ (২০)। সে একটি কলেজে পড়াশোনা করে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকালে গ্রামে সালিস বসায় সদকী ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বর) আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় ওই যুবক, ঘটনার শিকার ছাত্রী, দুই পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সালিসে বনিবনা না হলে ওইদিন সন্ধ্যায় থানায় মামলা করতে আসেন ওই ছাত্রীর বাবা। তবে পুলিশ মামলা না নিয়ে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে অভিযোগ স্বজনদের।
এলাকাবাসী ও স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর আগে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীর সঙ্গে প্রতিবেশী কলেজ পড়ুয়া যুবক তুষারের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। একপর্যায়ে তুষার বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। সসর্বশেষ গত ১০ জুন রাতে তুষার ওই ছাত্রীর শয়নকক্ষে ঢুকে শারীরিক সম্পর্ক করে। এ দিনের ঘটনা ছাত্রীর বাবা জানতে পেরে ১১ জুন ফার্মেসি থেকে বেবী চেক কিনে এনে বাড়িতে প্রাথমিক পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় ফলাফল পজেটিভ আসলে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়।
এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে মীমাংসার কথা বলে ১৬ জুন ছাত্রীকে একটি ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে তুষারের স্বজনরা বাচ্চা নষ্ট করে বলে দাবি করেন ওই ছাত্রীর বাবা। এরপর বিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় মেম্বর আব্দুর রাজ্জাক সালিস বসায়। তবে মেম্বরের সালিস না মেনে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত তুষার। পরে ছাত্রীর বাবা সন্ধ্যায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। তবে পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
ঘটনার শিকার ছাত্রীর বাবা অভিযোগ করে বলেন, মেয়ের মা নেই। আমি ঢাকায় থাকি। সেই সুযোগে তুষার বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে। বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ১৬ জুন তুষারের স্বজনরা মেয়েকে একটি ক্লিনিকে নিয়ে বাচ্চা নষ্ট করে। গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্জাক মেম্বর গ্রামে সালিস বসায়। কিন্তু সালিসে তুষার বিয়ে না করে পালিয়ে যায়। সন্ধ্যায় থানায় মামলা করতে গেলে ওসি সাহেব মামলা না নিয়ে আদালতে যেতে বলেন।
তিনি আরও বলেন, গরীব মানুষ বলে কোথাও বিচার পাচ্ছিনা। মা মরা মেয়েকে নিয়ে দ্বারেদ্বারে ঘুরেও বিচার পাচ্ছিনা। মান সম্মান সব শ্যাষ। মরা ছাড়া আর কোনো গতি নেই।
সালিস বসানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন সদকী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। তিনি ফোনে বলেন, অন্তঃসত্ত¡া কথা শুনে সবাই মিলে তুষারের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য সালিস বসানো হয়েছিল। কিন্তু তুষার বিয়ে না করায় সালিস ভেঙে দেওয়া হয়।
ধর্ষণের ঘটনায় সালিস করার নিয়ম আছে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিষয়টি পুলিশ জানে। সামাজিকতা রক্ষার জন্য অনেক সময় অনেক কিছুই করা লাগে বলে ফোনটি কেটে দেন।
আরও পড়ুন – ছাত্রাবাসে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু
কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলাইমান শেখ বলেন, ঘটনাটি মৌখিক ভাবে শুনেছি। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।