খোকসায় ছেলের বিরুদ্ধে বাবার অভিনব প্রতিবাদ

0
54

স্টাফ রিপোর্টার

বাবার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে পাঁচ দলিলে প্রায় ২১ বিঘা জমি লিখে নেয় একমাত্র ছেলে। তার পর বাবাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। এবার চিকিৎসা ও খোর পোষের জন্য অবশিষ্ট জমি থেকে মাত্র ১৭ শতক জমি বিক্রি করেন বৃদ্ধ। এই জমি রেজিস্ট্রেরি বাধা দেন বৃদ্ধের ছেলে। হাতিয়ার হিসেবে ব্যহার করা হচ্ছে কাথিত সাংবাদিকদের। এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃদ্ধসহ পরিবারের সদস্যরা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে দলিল বুকে জরিয়ে অভিনব প্রতিবাদে সামিল হন।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৫ টার দিকে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের সামনে প্রতিবাদে সামিল জমি বিক্রেতা বৃদ্ধ লিয়াকত আলী বিশ্বাস (৭৫) তার স্বামী পরিতক্তা ও সন্তানহীন দুই বৃদ্ধ বোন নাছিমা ও নাজমা। সাথে ছিলেন বৃদ্ধর তিন মেয়ে জামাতা ও প্রতিবেশীরা।

উপজেলার গোপগ্রাম ইউনিয়নের সাতপাখিয়া গ্রামের বৃদ্ধ লিয়াকত আলী বিশ্বাস অভিযোগ করেন, তিনি প্রায় ৩০ বিঘা জমির মালিক ছিলেন। নিজের একমাত্র ছেলে ফিরোজ আলী বৃদ্ধ বাবার সমস্ত সম্পতি নিজের নামে দলিল করে নিতে নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করে। বৃদ্ধ লিয়াকত আলী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে থানা পুলিশের কাছে ধর্ণা দেন। তাতে লাভ হয়নি। অবশেষে গত দুই বছরের পৃথক ৫ টি দলিলের মাধ্যমে প্রায় ১৬ বিঘা জমি নিজের নামে দলিল করে দিতে বাধ্য করেন ছেলে ফিরোজ আলী। এ ছাড়া পৃথক দুটি দলিলে আরও ৫ বিঘা জমি বিক্রি করে মোট টাকা আত্মসাত করে বলে অভিযোগ করেন বৃদ্ধ ও তার পরিবারের সদস্যরা। কয়েক মাস আগে বৃদ্ধের একটি হাত ভেঙ্গে দেয়। এ বারও তিনি থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। কিন্তু প্রতিকার পাননি বলেও জানান।

সম্প্রতি নিজে অসুস্থ্য হয়ে পরলে বৃদ্ধ লিয়াকত আলী বিশ্বাস ও তার দুই বোন নাছিমা ও নাজমা নিজ নামীয় অবশিষ্ট জমি থেকে মাত্র ১৭ শতক জমি বিক্রির করেন। বিক্রেতার নামে জমি রেজিস্ট্রিরি করতে গেলে বাধা দেয় বৃদ্ধের ছেলে ও কথিত একদল সাংবাদিক। বৃহস্পতিবার সরকারী তহবিলে অর্ধলাখ টাকা জমা দিয়ে রেজিস্ট্রির জন্য লেখা দলিল সাব-রেজিস্ট্রারের দপ্তরে জমা দেওয়া হয়। এ সময় বৃদ্ধের ছেলে ও একদল কথিত সাংবাদিক দলিল লেখক আমজাদ হোসেন বাবলু’র উপর চাপ দেয়। দ্বিতীয় দিনেও বন্ধ হয়ে যায় দলিল টি রেজিস্ট্রেরি। এ ঘটনার প্রতিবাদে দলিলের দাতারা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে প্রতিবাদ জানাতে অবস্থান নেন। সন্ধা পর্যন্ত অবস্থান করে অবশেষে তারা ফিরে যায়।

দলিল লেখক আমজাদ হোসেন বাবালুর সাথে কথা বলা চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ করেনি। তবে তার সহকারী ও ছেলে রাজিব বলেন, সাংবাদিকরা হুমকী দেওয়ায় তারা ভয়ে পেয়ে জমা দেওয়া দলিলটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

বৃদ্ধার জামাতা এম বারি অভিযোগ করেন, তার শ্বশুর বৃদ্ধ মানুষ। তার শ্যালক ফিরোজ আলী বৃদ্ধের উপর শারীরিক নির্যাতন করে ৫ দলিলে প্রায় ১৬ বিঘা জমি লিখে নিয়েছে। অসুস্থ্য বৃদ্ধ চিকিৎসার জন্য সামান্য জমি বিক্রি করেছেন। সেই জমি রেজিস্ট্রিরি করতে বাধা দিচ্ছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার তারা সাব-রেজিস্ট্রারের দপ্তরে দলিল জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু কথিত সাংবাদিকদের হুমকীর মুখে দলিল লেখক বাবলু মেম্বর দলিল প্রত্যাহার করে নেন। ফলে তাদের জমি আর রেজিস্ট্রি হয়নি।

তিনি আরও জানান, জমিবিক্রি করতে না পেরে বৃদ্ধের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যারা দলিল রেজিস্ট্রেরিতে বাধা দিচ্ছেন তাদের বিচারের দাবিও করেন।

বৃদ্ধের ছেলে ফিরোজ আলীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সাংবাদিকের উপস্থিতির খবর শুনে সে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে পালিয়ে যায়।

আরও পড়ুন – গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে অন্তত ৪ জন নিহত: বিবিসি বাংলা

সাব-রেজিস্ট্রার মোঃ রাসেল মল্লিকের সাথে কথা বলার জন্য তার অফিসিয়াল ও ব্যক্তিগত মোবাইল কল করা হয় তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

আরও পড়ুন – দৌলতপুর সীমান্তে পৃথক অভিযানে বিদেশি আগ্নেয়সহ আটক দুই