কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
দীর্ঘ প্রবাস জীবন ছেড়ে কৃত্রিমভাবে মৌমাছি চাষ করে সফল হয়েছেন কুষ্টিয়ার মোক্তার হোসেন (৩৫)।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সদকী ইউনিয়নের মট মালিয়াট গ্রামের মাঠের কয়েকশো বিঘা জমিতে ফুঁটেছে কচুরিপানা ও শাপলা ফুল। মাঠে পানি থাকায় ফুল হয়ে উঠেছে তরতাজা। সেই ফুলে মৌমাছি ছেড়ে দিয়ে মোক্তার হোসেন সংগ্রহ করছেন কেজি কেজি মধু।
খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের মোক্তার হোসেন শুধু কুমারখালী উপজেলাতেই নয় রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, গাইবাঁন্ধাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন মৌসুমে সরিষাসহ নানারকম ফুল থেকে মৌবাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করে সেই মধু বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করার পাশাপাশি নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
জানা যায়, প্রায় দশ বছর আগে মোক্তার হোসেন জীবিকার তাগিদে পরিবার পরিজন ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। সেখান ইলেক্ট্রিক কাজ করতেন তিনি। কিন্তু প্রবাসে তেমন একটা সুবিধা করতে না পেরে কয়েক বছর পর দেশে ফিরে এসে আত্মস্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যে মৌবাক্সের মাধ্যমে বেসিক থেকে মৌমাছি চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর গাইবান্ধা জেলার একটি ফার্মে কর্মচারী হিসেবে কাজে যোগদান করে বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। হাতে-কলমে কাজ করার সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার চাকুরী ছেড়ে দিয়ে নিজ উদ্যোগে শুরু করেন ভ্রাম্যমাণ মধু আহরণ। বছরে পাঁচ থেকে সাত মাস মধু আহরণ করে তার আট থেকে দশ লক্ষ টাকা আয় হয়।

মোক্তার হোসেন জানান,অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে বিদেশ গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে তেমন একটা সুবিধা করতে না পারায় বাড়ি ফিরে ছোট বেলার অভ্যাস মধু আহরণের জন্য বেসিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মাত্র ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। বাংলাদেশে এপিস সেরেনা ইন্ডিকা মৌমাছির চাষ হয়ে থাকে। আমার বর্তমানে ১৫০ টি মৌবাক্স আছে। প্রতি মৌবাক্স থেকে বছরে ১০ থেকে ১২ কেজি মধু পাওয়া যায়। তাতে করে ১৫০ টি মৌবাক্স থেকে প্রতি সপ্তাহে ১৫০ কেজি থেকে ১৭০ কেজি মধু সংগ্রহ করি।
তিনি আরও বলেন,বছরে আট থেকে দশ লক্ষ টাকার মধু বিক্রি করি। মৌমাছির খাবার ও অন্যান্য খরচ বাদে চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা লাভ হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ দেবাশীষ কুমার দাস জনান, আমরা নিজেরাই মৌমাছির বসবাসের স্থান ও প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট করে ফেলছি। বিশেষ করে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বিশ্বে মৌমাছির সংখ্যা দ্রুত কমছে। কীটনাশকের কারনে মৌমাছির মড়ক কৃষির জন্য অশনিসংকেত। কারণ বিশ্বজুড়ে ৩০ শতাংশ উদ্ভিদের পরাগায়ন ঘটায় মৌমাছি। যে কারণে মৌচাষে বেশী বেশী প্রান্তিক চাষী ও বেকার যুবকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
তিনি জানান, উপজেলায় এ বছর চার হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে এখনো পানি থাকায় তাতে শাপলা ও কচুরিপানার ফুল ফুটেছে। সেখান থেকে মোক্তার মধু সংগ্রহ করছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে প্রবাস ফেরত যুবক মোক্তার হোসেনের দেখা দেখি এখন এলাকার অনেক বেকার যুবক কৃত্রিমভাবে মৌমাছি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।