আমার বেটা ষোলডা বছর বাড়ি আসে না

0
147
গ্রেনেট হামলায় নিহত প্রধানমন্ত্রীর দেহরক্ষী মাহাবুবের মা

দুর্জয় বাউরি

সবাইতো চাকরি করে, ঈদ উৎসবে বউ ছেলে পেলে নিয়ে সবাই বাড়ি আসে কিন্তু আমার বেটা আর আসে না। ১৬ বছর ধরে ছেলের ছবিটি যত্নে আগলে রেখেছেন। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় জড়িত খুনিদের শাস্তি বাস্তবায়ন দেখে মরার পণ করেছেন ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা হাসিনা বেগম।

বছর ঘুরে এলেই জোরে-সোরে দোষীদের শাস্তি বাস্তবায়নের নানা খবর তিনি টেলিভিশনে শোনেন। মাঝে মাঝে রায় বাস্তবায়নের আশার আলোও দেখেন। কিন্তু সবাই ভুলে যায়। তিনি ভুলতে পারেন না নিহত ছেলে (তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার) দেহরক্ষি মাহাবুব রশিদের কথা।

ছেলের মৃত্যু বার্ষিকীর কয়েকদিন আগে কুষ্টিয়ার খোকসার ফুলবাড়ী গ্রামে নিজের ঘরের দাওয়ায় বসে খুব মৃদু স্বরে নিজের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, শারীরিক অবস্থা ভালো না। এখন আর বেশী ভাবতে পারেন না। বুকের মধ্যে “ধরপর” করে ওঠে। নিহত ছেলের স্ত্রী তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছে বলেও জানান। তবে নিহত মাহাবুবের দুই ছেলেকে নিয়েও তিনি স্বপ্ন দেখেন। তারা বড় হয়ে বাবার মুখ উজ্জ্বল করবে।

সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে নিহত হওয়ার পর থেকে তিনি অপেক্ষায় আছেন- দোষীদের বিচার ও সাজা বাস্তবায়ন দেখার। কিন্তু তার সে আশা আর বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বয়সের ভারে এখন আর বুক ভরে শ্বাস নিতে পারেন না। ছেলের মৃত্যুর পর তার শরীরে রোগ বাসা বেঁধেছে।

বৃদ্ধা হাসিনা বেগমের কাছে কোন হিসাবই বড় না। তিনিও স্বামী হারুন অর রশিদের মত ছেলের সমাধির স্থল সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও কবরস্থানে বিদ্যুতের আলোর ব্যবস্থা করার দাবি জানান। টেলিভিশনে অভিযুক্তদের বিচারের খবর অনেকবার শুনেছেন। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের কথা জেনেছেন কিন্তু তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

চরম করোনা পরিস্তিতিতেও নিহতের বাবা মা বৃদ্ধ দম্পতি কোন সরকারী সহয়তা পাননি। উল্টো করে স্থানীয় নেতারা তার পরিবারকে রাজাকার পরিবার বলে আখ্যা দিয়েছে। এ নিয়ে তিনি কষ্ট পেয়েছেন। প্রতিবাদ করেননি।

এবারেও ছেলের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে নিজের বাড়িতে মিলাদ মাহফিলের ব্যবস্থা করেছেন গাভীর দুধ বিক্রি করে জমানো টাকায়। তিনি বলেন, প্রতিমাসে কল্যান ফান্ড থেকে যে টাকা দেওয়া হয় তা দিয়ে দু’জনের সংসার চলতে চায় না। তাই তিনি দুধ বিক্রির টাকা থেকে নিহত ছেলের মৃত্যু বার্ষিকীর জন্য কিছু টাকা জমিয়ে রাখেন।