খোকসায় হামলা পাল্টা হামলায় ১০ বাড়ি ভাংচুর, আহত ১০

0
130
স্কুলের সীমান দেখাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।

সরকারী বিদ্যালয়ের জমি দখল মুক্তের চেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার

কুষ্টিয়ার খোকসার একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখল মুক্ত করা কেন্দ্র করে দুই দল গ্রামবাসীর মধ্যে হামলা পাল্টা হামলা ঘটনা ঘটেছে। দফায় দফায় হামলা পাল্টা হামলায় দু’পক্ষের ১০ বাড়ি ভাংচুর করা হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নারী পুরুষসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।

রবিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়নের কোমরভোগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমির দখলদার মান্নান মিস্ত্রী এবং দখল মুক্তের পক্ষে জমি দাতাদের একাংশের উত্তরসূরী সামসদ্দিন সেখের লোকজন ঢাল সরকি ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা পাল্টা হামলা শুরু করে। প্রায় ১ ঘন্টার অধিক সময় ধরে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা সামসদ্দিন সেখের ছেলের বাড়িসহ তার লোকজনের তিনটি বাড়ি ভাংচুর করে। এ সময় মান্নান মিস্ত্রী, আমদ আলী, বাবুল, সুনাই, আমানত, ওহিদুল, মোস্তফার বাড়ি ভাংচুর করে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনার পর এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে জমির মোল্লা (৪০), রবিউল (৪০), রাজু (২৬), ইমন (২২) ও ছাবিনা (৩৫) কে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ি

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, কোমরভোগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খরিদ ও দানের ৮৩ শতাংশ জমি। কয়েক বছর আগে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাবেদ মেম্বরের সরিক মান্নান মিস্ত্রী, আমদ আলী ও তার দুই ছেলে বাবলু ও আমানত বিদ্যালয়ে পশ্চিমের প্রায় ৭ শতাংশ জমি দখল করে গরুর খামারের গোয়াল ঘর ও খড়ের মাচা দিয়ে দখলে নেয়। ফলে সারা বছরই গরুর পঁচা গবরের গন্ধে শিশু শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কক্ষে বসতে সমস্যায় পরে।

সম্প্রতি বিদ্যালয়ের জমি উদ্ধার ও গোয়াল ঘর অপসারণের জন্য জমিদাতাদের একাংশ আদাজল খেয়ে মাঠে নামে। আর এখানেই বাঁধে বিপত্তি। শনিবার দিনগত রাতে দাতাদের উত্তরসূরি সামসুদ্দিন শেখের ওপর চড়াও হয় প্রতিপক্ষ। এর সূত্র ধরে পরদিন (রবিবার) সকাল থেকে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে।

সকালে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টা হামলার পর সরেজমিন গিয়ে হামলার ক্ষত চিহ্নে‎র দেখা মেলে। বিদ্যালয়টিতে দু’চার জন ছাত্র ছাত্রী এসেছে। দুই পক্ষের পুনঃহামলার ভয়ে শিক্ষকরা উপবেশন কক্ষ ছেড়ে বাইরে যাচ্ছেন না। বিদ্যালয়ের উত্তর এবং পশ্চিমের বাড়ি গুলোর একটিরও টিনের বেড়া অক্ষত নেই। প্রতিটি বাড়ির মধ্যে বস্তা বস্তা ইট ভাঙ্গা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কোন বাড়িতে পুরুষের দেখা মেলেনি। স্কুল কলেজ পরুয়া মেয়ে আর বৃদ্ধারা বাড়িতে আছেন। তারাই ঘুরে ঘুরে বাপ-ভাইয়ের ক্ষত বিক্ষত ঘরবাড়ি দেখালেন।

নূর জাহানের একমাত্র ছেলে মোস্তফা। ঢাকার উচ্চ আদালতের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। বছরে একবার বাড়ি আসে। তার বাড়িও ভাংচুর করেছে প্রতিপক্ষ। তার বাড়ির ফ্রিজ থেকে সবই ভেঙ্গে রেখে গেছে হামলাকারীরা। তারা নিয়ে গেছে মহিলার তিন মেয়ের প্রায় ৫ ভড়ি স্বর্নের অলঙ্কার।

নূর জাহানের বসত ঘর

জমি দাতাদের উত্তরসূরি সামসুদ্দিনের শেখের ছেলে শরিফুল অভিযোগ করেন, বর্তমান প্রধান শিক্ষক আর সভাপতি জাবেদ মেম্বর যোগসাযোসে স্কুলের জমিতে গোয়াল ঘর তুলতে সহায়তা করেছিল। গ্রামবাসী তখনও বাঁধা দিয়ে ছিল। রবিবারের হামলার ঘটনায় তিনি থানায় মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর ও বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি জাবেদ আলী জানান, তার সরিকরা নিজেদের ৬ শতাংশ জমিতে গোয়াল ঘর তুলে দখল নিয়েছে। স্কুলের কাছে এই জমির কোন দলিল নাই। আজকের হামলার ঘটনায় তিনি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান।

আরো পড়ুন – কুমারখালীতে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান

প্রধান শিক্ষক আরশেদ আলম জানান, তিনি আসার আগেই স্কুলের জমি দখল করে গোয়াল ঘর তোলা হয়। গোয়াল ঘর এবং স্কুল ঘরের দুরুত্ব ৫/৬ ফুট। বর্ষা মৌসূমের ৫ মাস পঁচা গবরের গন্ধে অফিসসহ শ্রেণি কক্ষে বসা যায় না। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ের জমি মাপা হয়েছে। শুধু গোয়াল ঘর নয় বসত বাড়ির ২টা ঘর বেঁধে গেছে। উচ্ছেদের জন্য তিনি দফায় দফায় উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন করছেন কিন্তু লাভ হয়নি।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দা নাজনিন আলম বলেন, প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয়দের আবেদনের প্রেক্ষিতে উদ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলা হয়েছে। ব্যবস্থা নিব।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আশিকুর রহমান জানান, ঘটনা স্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। শরিফুলের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত আছে।