পদ্মা নদীর চর থেকে যুবকের খন্ডিত লাশ উদ্ধার

0
113

কুষ্টিয়াি প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পদ্মা নদীর চর থেকে এক যুবকের খন্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশের নয়টি খন্ড পৃথক ছয় জায়গায় পুঁতে রাখা হয়েছিল।

শনিবার সকালে সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের কান্তিনগর বোয়ালদহ সংলগ্ন পদ্মার চর থেকে লাশের টুকরোগুলো উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে চাঁদার দাবিতে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সাবেক সহ সভাপতি এস কে সজিবের নেতৃত্ব এই হত্যাকান্ড। পুলিশ সজিবসহ পাঁচজনকে আটক করেছে।

নিহত যুবকের নাম মিলন হোসেন (২৪)। তিনি দৌলতপুর উপজেলার পূর্ব বাহিরমাদি গ্রামের মাওলা বক্সের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং ই বøকের ভাড়া বাসায় থাকতেন।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) পলাশ কান্তিু নাথ জানান, বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে মিলন বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় তার স্ত্রী মুমি খাতুন কুষ্টিয়া মডেল থানায় জিডি করেন। জিডির প্রেেিত তদন্ত শুরু করে পুলিশ। মুঠোফোনের একটি কল লিস্টের সূত্রধরে প্রথমে মিলনের এক বন্ধুকে আটক করা হয়। স্বীকারোক্তিতে সে জানা যায়, আরেক বন্ধু সজিবের নেতৃত্বে মিলনকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে শুক্রবার বিকালে অভিযান চালিয়ে সজিবসহ আরো চারজনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা মিলনকে হত্যা করে তার লাশ টুকরো করে নদীর চরে পুঁতে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে। এরপর শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে তাদেরকে নিয়ে হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের কান্তিনগর বোয়ালদহ পদ্মা নদীর চরে অভিযানে যায় পুলিশ। রাতভর অভিযান চালিয়ে নদীর চরের ছয়টি স্থান থেকে মিলনের খন্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র বাঁধ বাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

তিনি আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, টাকার দাবিতে মিলনকে হত্যা করা হয়েছে। জড়িতরা সবাই একে অপরের পরিচিত। মিলন বাড়ি থেকে অনলাইনে কাজ করতো। নিখোঁজের দিন তাকে মুঠোফোনে ডেকে হাউজিং এলাকার একটি বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ওইদিন রাতেই তাকে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ গুম করার সুবিধার্থে ধারালো অস্ত্র দিয়ে লাশ টুকরো টুকরো করে নদীর চরে পুঁতে রাখা হয়েছিল। আর এই পুরো হত্যাকান্ডটির নেতৃত্ব দিয়েছে তারই বন্ধু সজিব। এর সাথে অন্যকোন ঘটনা আছে কিনা তা নিয়ে আরো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, এস কে সজিব কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ছিলেন। কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ভাংচুর ও ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের মারধরের অভিযোগে তাকে বহিস্কার করা হয়। সেই মামলায় জেল খেটেছেন তিনি। এছাড়া তার নামে চাঁদাবাজিসহ বেশ কয়েকটি মামলাও রয়েছে।

নিহত যুবকের স্ত্রী মিমি খাতুন ‘আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব? কার কাছে থাকব?’ বলে আহাজারি করছিলেন। মর্গের ভেতরে লাশ নেওয়ার সময় ঢুকতে চান মিমি। তখন একজন তাঁকে বলতে থাকেন, লাশের গন্ধ হচ্ছে, যেতে পারবেন না। কাঁদতে কাঁদতে মিমি খাতুন বলতে থাকেন, ‘গন্ধে আমার কিছু হবে না। স্বামীর লাশটা দেখতে দেন।’

মিমির বাবা মহিবুল ইসলাম বলেন, গত রোজার ঈদের কয়েক দিন পর মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন। বছরও ঘুরল না। জামাতাকে হারালেন। এই হত্যাকান্ডের বিচার চান তিনি।