সৈয়দ মাছ-উদ রুমী সেতু টোল আদায়ের বিষয়ে মতবিনিময় সভা

0
48

কুমারখালী প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া – রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে গড়াই নদীর ওপরে নির্মিত সৈয়দ মাছ-উদ রুমী সেতুর টোল আদায় নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে চরম মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দলোনের পর থেকে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলার ভয়ে বেশ কিছুদিন যাবৎ টোল আদায়কারীরা টোল প্লাজায় আসতেই পারছেনা। তাই টোল আদায় বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সৈয়দ মাছ-উদ রুমী সেতুর টোল আদায় বিষয়ে কুমারখালী প্রশাসন উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগ আয়োজিত সভায় পরিবহন মালিক সমিতি, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা উপস্থিত ছিলেন।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, সেতু নির্মাণের কয়েকগুণ বেশি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তাই আর টোল আদায় করা যাবেনা। জনস্বার্থে স্থায়ীভাবে তারা টোল বন্ধের দাবি জানান।

আর প্রশাসন ও সওজ কর্তারা বলেন, টোল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পেলে টোল আদায় স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে।

সওজ কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া – রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসকড়ের গড়াই নদীর ওপর রয়েছে সেতুটি। এর দ্যৈর্ঘ ৫১৮ মিটার এবং প্রস্থ ১২ মিটার। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ৭ আগষ্ট সকালে টোল আদায় বন্ধের দাবিতে টোলপ্লাজায় আদায়কারীদের মারধরের পর ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ জনতা। সেসময় টোলপ্লাজা ছেড়ে পালিয়ে যান আদায়কারীরা। এরপর কিছুদিন বন্ধের পর ১৩ আগষ্ট পুনরায় সওজ কর্তৃপক্ষ টোল আদায় করতে গেলে পুনরায় তাদের হুমকি – ধামকি দেন বিক্ষুব্ধ জনতা। ফলে নিরাপত্তার অভাবে আর টোল আদায় চালু হয়নি। এতে প্রতিদিন তিন – চার লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

আরও পড়ুন – বিএনপি’র কর্মীকে হত্যা মামলায় সাবেক এমপি রউফ কারাগারে

আরো জানা গেছে, ২০০৪ সালে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কুষ্টিয়া – রাজবাড়ী সড়কে কুমারখালী উপজেলার গড়াই নদীর ওপর সৈয়দ মাছ উদ রুমী সেতু নির্মাণ করে সওজ বিভাগ। ২০০৫ সাল থেকে সেতু ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ইজারাদারের মাধ্যমে টোল আদায় করছে সওজ বিভাগ। এবারও সেতুটি ৩৩ কোটি টাকায় ইজারাদেওয়া হয়েছে বলে জানাগেছে। তবে চলমান পরিস্থিতির কারণে দায়িত্ব বুঝে নেননি ইজারাদার।

টোল আদায় বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সদস্য এ্যাডভোকেট গোলাম মুহাম্মদ, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক লুৎফর রহমান, উপজেলা জায়ামেত ইসলামীর আমির আফজাল হোসাইন, কুষ্টিয়া – রাজবাড়ী মিনি বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলী, কুষ্টিয়া বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আবুল ফজল সেলিম, কুমারখালী নাগরিক কমিটির সভাপতি আকরাম হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আসাদুজ্জামান আলী প্রমূখ।

সভায় উপস্থিত স্থানীয়রা দাবি করেন, সেতু নির্মাণ ব্যয়ের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এখনও টোল আদায় অব্যাহত রয়েছে। টোল আদায়কারীরা যাত্রীদের নানান হয়রানি করে। এজন্য আর টোল আদায় করা যাবেনা। জনস্বার্থে স্থায়ীভাবে তারা টোল বন্ধের দাবি জানান।

তবে এখনও পর্যন্ত টোল আদায়ের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন, কুষ্টিয়া সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম।

তিনি বলেন, টোলপ্লাজায় কয়েক দফা হামলা হয়েছে। নিরাপত্তার অভাবে টোল আদায় বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতিদিন তিন – চার লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সেজন্য টোল আদায় বিষয়ক এই মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা স্থায়ীভাবে টোল বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি লিখিতভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, টোল আদায় বিষয়ে সওজের কর্মকর্তা, পরিবহন সমিতি, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ভুক্তভোগীরা টোল বন্ধের দাবি তুলেছেন। বিষয়টি রেজুলেশন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।