কুষ্টিয়ায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ চালুর দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

0
88

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর দাবিতে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রায় আড়াই ঘন্টা অবরোধ করে রেখে ছিলেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।

দাবি আদায়ে সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত হাতে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ আনোয়ারুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পরিচালকের অফিস কক্ষে তালা মেরে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

আন্দোলনকারীরা শিক্ষার্থীদের দাবি, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালু না হওয়ায় মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, রোগীসহ কুষ্টিয়াসহ আশে পাশের কয়েক জেলার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হয়ে আসার পাশাপাশি নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর দাবি জানিয়ে আসলেও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে চরম উদাসীন। ফলে বাধ্য হয়েই তারা ক্লাস ফেলে রেখে রাজপথে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করতে বাধ্য হয়েছেন। দ্রæত হাসপাতাল চালু করা না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়াসহ কঠোর কর্মসূচীর ঘোষণা দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে।

মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা বলছেন, সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে আমরা আশ্বাস পেয়েছি। আগামী ২০ দিনের মধ্যে শিশু ও মেডিসিন বিভাগ চালু করা হবে বলে পরিচালক আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।

আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রকি আল নির্ঝর বলেন, সকালে আমরা শিক্ষার্থীরা পরিচালকের রুমে গিয়ে হাসপাতাল চালুর বিষয়ে কথা বলি। এর আগে পরিচালক আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন প্রশাসনিক অনুমোদন পেলে হাসপাতাল চালু হবে। সেই অনুমোদন পাওয়ার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও হাসপাতাল চালু হয়নি। তিনি বর্তমানে কোনো যৌক্তিক সমাধানও দিচ্ছেন না। এজন্য পরিচালকের রুম তালা দিয়ে আমরা মহাসড়ক অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছি।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গনেই বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যাম্প রয়েছে। মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে একপর্যায়ে সেনাবাহিনী ও শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল আলোচনার জন্য পরিচালকের রুমে যান। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা শেষে বের হয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী আল মামুন। মামুন বলেন, পরিচালক আমাদের আশ্বস্ত করেছেন আগামী ২০ দিনের মধ্যে হাসপাতালের অন্তত দুটি বিভাগ, শিশু ও মেডিসিন বিভাগ পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু করা হবে। এই দাবি পূরণ না হলে আমরা পরিচালকের পদত্যাগ দাবি করব। আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি দেব। সেই সঙ্গে মন্ত্রণালয় কি করল জানিনা আমরা হাসপাতাল চালু করব।

এ সময় আন্দোলনকারীরা শিক্ষার্থীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করা হয়েছে। বারবার সময় ও অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৩ বছরেও পূর্ণাঙ্গরুপে চালু করা যায়নি হাসপাতালটি। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস করার জন্য হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ রুপে চালু হওয়া খুবই জরুরি। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে অপ্রতুল যন্ত্রাংশ, ব্যাপক রোগীর ভিড়, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশসহ নানা সমস্যা ও সংকট রয়েছে। কোন প্রকার কালক্ষেপন না করে সরকারের কাছে অবিলম্বে এই মেডিকেল কলেজ পূর্ণাঙ্গরুপে চালুর দাবি জানান তারা।

হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ ভাবে চালুর বিষয়ে পরিচালক আনোয়ারুল কবির সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবসম্মত না হলেও মেনে নিতে হয়েছে। আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করব। আগামী ২০ দিনের মধ্যে শিশু ও মেডিসিন বিভাগ দুটি অন্তত চালু করা হবে।

জানা গেছে, গত বছরের ১৫ নভেম্বর নবনির্মিত আংশিক হাসপাতাল ভবনের একটি বøকে বহির্বিভাগ চালু হয়। সেখানে শুধু বহির্বিভাগে কিছু রোগী দেখা হয়। হাসপাতালে রোগী ভর্তি, এমনকি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয় না। যেতে হয় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। এছাড়াও মেডিকেল শিক্ষার্থীদেরকেও মেডিকেল কলেজ থেকে জেনারেল হাসপাতালে যেতে হয়। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ সেবা প্রত্যাশী সাধারণ মানুষ জনকে।

আরও পড়ুন –  খোকসায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩ জন আটক

সূূত্র জানায়, ২০১১ সালে কুষ্টিয়া শহরে ম্যাটসে (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) অস্থায়ীভাবে মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয় ২০২২ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। সেখানে ছয় তলা একাডেমিক ভবন, চার তলা করে দুটি হোস্টেল, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তিন ও দুই তলা বিশিষ্ট ডরমিটরি, মসজিদসহ আরও কিছু ভবন হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের পকেটের টাকা খরচ করে যাতায়ত করে ক্লিনিক্যাল ক্লাস করতে হয়।