কুষ্টিয়ার তিন আওয়ামী লীগ নেতা কারাগারে

0
8
আটক কুষ্টিযা আওয়ামী লীগের তিন নেতা।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুই নেতাসহ তিনজনকে রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

রবিবার দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে শনিবার দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে তাদের আটক করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় নিয়ে আসা হয়। এরপর বিভিন্ন মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন কুষ্টিয়া পৌর আওয়ামী লীগের কোষাধাক্ষ্য ওমর ফারুক (৪৭), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মীর রেজাউল ইসলাম বাবু (৫৫) ও পৌর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আশরাফুজ্জামান সুজন (৪৬)। কুষ্টিয়া আদালতের পরিদর্শক জহুরুল ইসলাম বলেন, বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে তিনজনকেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কুষ্টিয়া মডেল থানা সূত্র জানায়, গোপন সংবাদ ও প্রযুুক্তি ব্যবহার করে শনিবার রাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ওমর ফারুক, রেজাউল ও আশরাফুজ্জামানকে আটক করা হয়। এরপর রাতেই তাদের কুষ্টিয়া মডেল থানায় নেওয়া হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের পর গত বছরের ১৫ আগষ্ট কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। ওই মামলার এজাহার নামীয় আসামী মীর রেজাউল ইসলাম। তাকে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে নেওয়া হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই খাইরুজ্জামান জানান, রেজাউল ইসলামকে ৫দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে শুনানী হবে।

অপরদিকে চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল কুষ্টিয়া মডেল থানায় নাশকতার অভিযোগে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে বিএনপি কর্মি ইমন আলী পরিচয়ে এক ব্যক্তি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ওমর ফারুক ও আশরাফুজ্জামানকে সন্দিগ্ধ আসামী হিসাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাদেরকে আদালতে নেওয়া হলে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

জানা গেছে, কুষ্টিয়া শহরের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র চৌড়হাস মোড়ে রেজাউল ইসলামের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার সুবাদে সেখানে ও তার আশেপাশে ফুলতলা বাজার এলাকায় দোকানপাট ও যানবাহনের স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন বাবু। এলাকায় তার নিজস্ব বাহিনী ছিল। সেই বাহিনী নিয়ে বিভিন্ন বিচার শালিস করে টাকা নিতো। এছাড়া মারধর ও প্রভাব বিস্তারের ব্যাপক অভিযোগ ছিল। চৌড়হাস এলাকায় বিভিন্ন নির্বাচনে তার নিজস্ব বাহিনী নিয়ে ভোটকেন্দ্র দখলে রাখতো। ৫ আগস্টের পর রেজাউল পালিয়ে যান।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ-সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের অর্থদাতা ওমর ফারুক (৪৭) এবং কুষ্টিয়া শহর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও আলোচিত এনআইডি জালিয়াতির অন্যতম হোতা আশরাফুজ্জামান সুজন (৪৬)। তারা সকলেই জুলাই আন্দোলনকারীদের উপর হামলা ও হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে ওমর ফারুক সদর উপজেলার খাজানগর এলাকায় অটো রাইসমিলের মালিক। পাশাপাশি তিনি হঠাৎ করে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদ পেয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর-৩ আসনের এমপি মাহবুব উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানের সাথে সখ্যতা থাকায় রাতারাতি নেতা বনে যান ওমর ফারুক। ওমর ফারুক আতাউর রহমান আতার ব্যবসায়িক অংশিদার ছাড়াও অর্থের যোগান দাতা ছিলেন বলে জনশ্রæতি রয়েছে।

আরও পড়ুন – চাকা

যুবলীগ নেতা আশরাফুজ্জামান সুজন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডে বহুল আলোচিত কোটি টাকার জমি জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করার মামলার আসামী। কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলামের আস্থাভাজন থাকায় এক সময়ের বিএনপি নেতা আশরাফুজ্জামান পৌর যুবলীগের আহবায়কের পদ বাগিয়ে নেন।