মেলা কেন্দ্র করে জামায়াত-বিএনপির সংঘর্ষে আহত ১১

0
74

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে প্রায় দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী গাজীকালু – চম্পাবতী মেলা বসানো নিয়ে জামায়াত ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার ( ২০ মে) সন্ধ্যায় উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা চাপাইগাছি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সময় মেলায় আগত দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। তবে মেলায় হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষ নিয়ে উভয়পক্ষের পাল্টা-পাল্টি বক্তব্য পাওয়া গেছে।

জামায়াতের আহতরা হলেন জগন্নাথপুর ইউনিয়ন উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও মহেন্দ্রপুর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান, জামায়াতের কর্মী কুদ্দুস প্রামাণিক (৭০), শহিদুলের ছেলে তুহিন হোসেন, আক্কাস আলীর ছেলে জিহাদ হোসেন, সুকচাঁদের ছেলে জামাত আলী, জালালের ছেলে ইউনুস আলী। তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

বিএনপির আহতরা হলেন-খোকসা সরকারি কলেজের প্রভাষক সরাফাত সুলতান, বাঁখই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক টিপু সুলতান, গফুর শেখের ছেলে সুকুর শেখ, আজিজুলের ছেলে শরীফ, আসাকুর রহমান। তারা বিএনপির কর্মী – সমর্থক। তারা কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড়শ বছর ধরে হোগলা চাপাইগাছি বাজারে গাজীকালু – চম্পাবতী মেলার আয়োজন করে আসছেন স্থানীয়রা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে মেলায় অশ্লীল কর্মকান্ড ও জুয়া খেলার অভিযোগ তুলে মেলা বন্ধের দাবি তোলেন জামায়াত ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আর প্রশাসনের অনুমতি না মিললেও বিএনপির সমর্থকরা মেলা বসানোর চেষ্টা করেন। এ নিয়ে মঙ্গলবার বিকাল থেকে এলাকায় উভয় দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ টহল শুরু করে। তবুও এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ সংঘর্ষের সময় অস্ত্র, হাঁসুয়া, রাম দা, লাঠিসোটাঁ নিয়ে অন্তত ৩০ টি দোকানে হামলা, ভাঙচুর লুটপাট চালানো হয়।

এ সময় হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করে জগন্নাথপুর ইউনিয়ন উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, মেলায় অশ্লীল কর্মকান্ড ও জুয়ার আসর বসানো হয়। সেজন্য প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। তবুও বিএনপি ও মেলা কমিটি মেলার আয়োজন করেছেন। আমরা মেলার বিষয় জানতে গেলে প্রতিপক্ষরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছেন। আমিসহ আমাদের অনেকেই আহত হয়েছেন। থানায় মামলা করা হবে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির সমর্থক ও খোকসা সরকারি কলেজের প্রভাষক সরাফাত সুলতান বলেন, জামায়াতের কয়েকশ লোকজন আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। মেলার দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। বিচারের আশায় থানায় মামলা করব।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বাজারের কলা ব্যবসায়ী মফি শেখের ছেলে নাদের শেখ (৬৫) বলেন, শও শও বছর ধরে মেলা হয়ে আসছে। আজ দেখলাম দুইপক্ষের দাবড়া দাবড়ি। জামায়াতের লোক বেশি ছিল। তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল।

মেলায় হরেক মালের দোকান বসিয়েছেন পাবনার চাটমোহরের দিলবার হোসেনের ছেলে আরজ আলী। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আসরের পর থেকে জামায়াত শিবিরের লোকজন বার বার উঠে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন। পরে সন্ধ্যার একটু আগে কয়েক শত টুপিপড়া লোক রামদা, হাঁসুয়া, লাঠিসোঁটা নিয়ে দোকানে হামলা চালায়। ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম। পরে এসে দেখি মালামাল কিছুই নেই। প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর আফজাল হোসাইন বলেন, ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডে জামায়াতের নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা প্রতিবাদ করতে গেলে মেলা কমিটির লোকজন হামলা করেছেন। থানায় মামলা করা হবে।

আরও পড়ুন – কুমারখালীতে সেতুর টোল আদায় বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

শতবছর ধরে চলা আসা মেলায় এবার অনুমতি মেলেনি বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ। তিনি বলেন, মেলা বসানো নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েক জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখন এলাকার পরিবেশ শান্ত আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।