খোকসায় বালু ফেলে কালভাট ও নর্দমা বন্ধ করায় ৫০ পরিবার পানিবন্ধি

0
15

স্টাফ রিপোর্টার

গড়াই নদী থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ফেলে পানি নিষ্কাষনের কালভাট ও পাকা নর্দমা বন্ধ করে দেওয়ায় একটি গ্রামের ৫০ পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পরেছে। প্রতিটি বাড়ির উঠানে পানি থৈই থৈই করছে। জ্বলেনা রান্নার উনোন। অনেকেই গরু বাছুর রেখে এসেছেন অন্য গ্রামের আত্মীয় বাড়ি।

খোকসা পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমলাপুর মধ্যপাড়া। শাহ আলম নামের এক প্রভাবাশালী গড়াই নদী থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু এনে গ্রামের পিচ ঢালা রাস্তার পাশে নিজের জমি ভরাট শুরু করেন। এক পর্যায়ে প্রায় ৫০ বছর পুরাতন একটি কালভাট ও প্রায় ১০০ ফুট লম্বা পাকা নর্দমা বন্ধ করে দেন। গ্রামের পানি নিষ্কাষনের প্রধান পথ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বালুর সাথে আসা পানি ৫০ পরিবারের ঘর বাড়িতে পানি ঢুকে পরেছে। অনেকের বাড়ির মধ্যে এখনো হাটু সমান পানি রয়েছে। গত রবিবার ও সোমবার গ্রামবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে একটি বিদ্যুত চালিত মোটর পাম্প ভাড়ায় এনে পানি সেচের কাজ করেন। এতে কিছুটা কাজ হলেও ড্রেজারের বালুর সাথে আসা নতুন পানি আবার ঘর বাড়িতে ঢুকে পরছে। এতে পানিবন্ধি পরিবার গুলো মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এ ছাড়া শাহ আলমের বিরুদ্ধে কালভাটের পাশের রাস্তার জমি থেকে একটি আম গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার বিকালে মধ্যপাড়ায় ঢুকতেই স্থানীয়রা তাদের অভিযোগের ঝাপি নিয়ে এগিয়ে আসেন। প্রায় দেড় মাস পানি বন্ধি হয়ে আছে রিয়াজ, লাল্টু, অরুনার পরিবারের মত ৫০ পরিবার। রান্না ঘরের উননের মধ্যে পানি উঠে গেছে। ফলে পানিবন্ধি পরিবার গুলো রান্না করতে পারেছে না। অনেকেই গরু ছাগল অন্য পাড়ায় আত্মী স্বজনদের বাড়িতে রেখে এসেছেন। পানিতে ভিজে ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজে যেতে পারছে না।

একটি মসজিদের মোয়াজ্জিম সাজ্জাদ হোসেন, টিপুসহ কয়েকজন রিকাশা শ্রমিক বলেন, শাহ আলম তার নিজের জমি বালু ভরাট করার সময় একটি কাল ভাট ও ব্রিটিশ আমলের ১০০ ফুট লম্বা একটি পাকা নর্দমা (ড্রেন) বন্ধ করায় জলাদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিনই নতুন নতুন জলাশয় ভড়াট করার জন্য ড্রেজারে আনা বালুর সাথে আসা পানিতে অনেক বাড়ি প্লাবিত হচ্ছে। অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পরছে। তারা পুরাতন নর্দমা ও কালভাট খুলে দেওয়ার দাবি করেন।

তারা আরও জানান, গত দুই দিন আগে গ্রামের জলবন্ধি মানুষ পৌর সভায় অভিযোগ করেছে। তাতে লাভ হয়নি। উল্টো করে অভিযোগ কারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

বয়সী অরুনা জানান, তার বড়ির দুই পাশ দিয়ে পৌর সভা পাকা রাস্তা করেছে। গ্রামের ডোবা জমি গুলো অবৈধ বালু দিয়ে ভরাট করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামের পাকা রাস্তার নিচে দিয়ে কালভাট ছিলো। শাহ আলম নামের একজন জমির মালিক বালু ফেলে সেই কালভাট বন্ধ করায় প্রায় দেড় মাস তার পরিবার পানিবন্ধে হয়ে আছে। অনেক নেতার হাত পায়ে ধরেছেন কিন্তু কেউ সহায়তা করেনি।

তিন সন্তানের মা রুমী খাতুন বলেন, ঘর বাড়িতে পানি উঠে পরছে। তার বড়ি যাওয়ার রাস্তাসহ গ্রামে ভিতরের ছোট পাতা রাস্তাটিও পানিতে ডুবে আছে। তার ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না।

শাহ আলমের সাথে কথা বলার জন্য তার বাড়িতে যাওয়া হয়। কিন্তু তিনি এ প্রতিবেদকের সামনে আসেনি। এমন কি ফোন নম্বর চাওয়া হলে তার পরিবারের লোক নম্বরও দেয়নি।

শাহ আলমের ছেলে ফিরোজ হোসেন বলেন, কালভাট সরকারী জমি হোক আর বে-সরকারী জমি হোকে তারা জমি ভরাট করলে অথবা বাড়ি করলে আপনি আপনি কালভাট বন্ধ হয়ে যেতো। তাই হয়েছে। তা ছাড়া জমির মালিও তারা।
পানি নিষ্কাষনের কাজে ব্যহার করা বিদ্যুতের মোটর পাম্পের মালিক জিকু মোল্লা বলেন, কে তার টাকা দেবে তা সে জানে না। তবে যা করেছেন প্রতিবেশীদের সুবিধার জন্য করেছেন।

অবৈধ ড্রেজারের মালিক হাকিম মোল্লার সাথে কথা বললে তিনি জানান, ড্রেজার ও ট্রলার (নৌকা) তার এটা ঠিক আছে। কিন্তু তার মেশিন ভাড়া নিয়েছে মোস্তাক নামের একজন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার ও দায়িত্ব প্রাপ্ত পৌর প্রসাশক রেশমা খাতুনের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, এ ঘটনায় তার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। এ ছাড়া পৌর এলাকায় ড্রেজারের পাইপ ফেলতে পৌর সভা থেকে অনুমতি নিতে হয়। কেউ অনুমতিও নেয়নি।