স্টাফ রিপোর্টার
কুষ্টিয়ার খোকসা সরকারি কলেজের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতার প্রায় ৭২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে তার কক্ষে তালা দিয়ে আটকে রাখেন শিক্ষক কর্মচারীরা। প্রায় ২ ঘন্টা পর স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যস্ততায় শর্ত সাপেক্ষে তাকে মুক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টার দিকে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রধান বেলাল উদ্দিনের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তিনি তার বিভাগে অফিসে একাই ছিলেন। সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অফিসে দরজায় তালা দিয়ে কলেজের শিক্ষক কর্মচারীরা তার দরজার সামনে অবস্থান নেয়। এ ভাবেই চলতে থাকে প্রায় ২ ঘন্টা। অবশেষে বেলা ২ টার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজের অধ্যক্ষের যৌথ উদ্যোগে অভিযোগকারী শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে অবরুদ্ধ সাবেক অধ্যক্ষের কক্ষের তারা খুলে দেন।
সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বেলাল উদ্দিনের সাথে তার কক্ষেই অভিযোগ কারীদের মুখোমুখি করানো হয়। প্রায় ১ ঘন্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলে। পরে প্রশাসন ও বর্তমান অধ্যক্ষের পক্ষ থেকে সাংবাদিদের বিফিং করা হয়।
সাবেক অধ্যক্ষ বেলার উদ্দিনের কক্ষের সামনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষক শামসুল আলম, নাহিদুল ইসলাম, শরাফত আলীসহ অন্যরা অভিযোগ করেন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্বে ছিলেন প্রায় ১৩ মাস। এ সময়ের মধ্যে কলেজের ১৬ জন অত্যাবশ্যক কর্মচারীর ৫ মাসের বেতন ভাতার সাড়ে সাত লাখ টাকা, একই সময়ে অনুষ্ঠিত ৬টি বোর্ড ও জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের পরীক্ষা পরিচালনা ব্যয়ের ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা সহ ৩২ হিসাবের মোট প্রায় ৭২ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন।
শিক্ষকরা স্পষ্ঠ অভিযোগ করেন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বেলাল উদ্দিন ও প্রধান অফিস সহকারী নাজমূল হুদা রাসেল এই টাকা আত্মসাত করেছেন। ইতোমধ্যে কলেজের অভ্যন্তরীন অডিটে টাকা আত্মসাতের অভিযোগের প্রমান মিলেছে বলেও তারা দাবি করেন। তারা আরও বলেন, সাবেক অধ্যক্ষের কাছে আত্মসাতের চাকা ফেরত চাওয়া তিনি গা ঢাকা দিয়েছিলেন। দীর্ঘ দিন পর বৃহস্পতিবার তিনি কলেজে আসার সাথে সাথে বাধ্য হয়ে তারা তালা দিয়ে আটকে দিয়েছেন।
অবরুদ্ধ অবস্থায় জানালা দিয়ে সমকাল প্রতিনিধির সাথে কথা বলার সময় অভিযোগ অস্বীকার করেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, পূর্ববর্তী অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে সাত লাখ টাকা দেনা রেখে গিয়েছিলেন। তিনি ব্যাংকে প্রায় দেড় লাখ টাকা রেখে এসেছেন। এর মধ্যে কোন ঘাপলা হলে তার জন্য অফিস সহকারী নাজমূল হুদা রাসেল দায়ি।
কলেজের অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকালী নাজমূল হুদা রাসেল নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তিনি বলেন অধ্যক্ষ বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে টাকা নিয়ে গেছে।
কলেজের অধ্যক্ষ শিশির কুমার রায় বলেন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযেগ ওঠায় তিনি ৩ সদস্যের অডিট কমিটি করে অডিট করিয়েছেন। সেখানে অনেক টাকা আত্মসাতের অডিট আপত্তি উঠেছে। এ থেকে আত্মসাতের সত্যতা পাওয়া গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ্ত রায় দীপন সাংবাদিকদের ব্রিফিং কালে বলেন, দুই পক্ষকেই তারা মুখোমুখি করেছিলেন। অভিযোগ অনেক। আরও কয়েক দফায় বৈঠকের পর অভিযোগের সত্য মিথ্যা বোঝা যাবে। তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।