১১ সন্তানের কেউ শতবর্ষী বৃদ্ধের দায়িত্ব নেয়নি

0
22

স্টাফ রিপোর্টার

ইসমাইল শেখ। বয়স ১০৭ বছর। শেষ জীবনে আশ্রয় হয়েছে নিজের জমির মাথায় রাস্তার পাশে টিনের খুপরি ঘরে। জীবিত ১১ সন্তানের কেউই বৃদ্ধের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেননি। নিজের নামের বয়স্কভাতার কার্ডের টাকায় চাউল কিনে দিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খান দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর তৃতীয় ছেলের সংসারে।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঝালুকাদহ গ্রামে তিন পুরুষ ধরে বসবাস করছেন শতবষী ইসমাইল শেখ। নিজের সামান্য জমি চাষের পাশা পাশি অন্যের বাড়িতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে জীবন গুজার (কাটিয়েছেন) করেছেন। ২০ বছর আগে বৃদ্ধের প্রথম স্ত্রী ১৩ সন্তানের মা কমেলা নেছা (৫৫) এর মারা গেলে হাবিয়া খাতুনকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে ঘরে আনেন। সেও ৯ সন্তানের মা। তিন বছর আগে নিজে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে ফেলে বাবার বাড়ি চলে গেছেন। বৃদ্ধের জীবিত ১১ সন্তানের কেই বৃদ্বের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়নি। ফলে পুরাতন শতফাটা টিন আর কাপড়ে ঘেরা খুপরি ঘরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।

শনিবার তখন সকাল সাডে ১১ টা। ঈশ্বরদী- ভবানীগঞ্জ সড়কের ঝালুকাহদহ গ্রামের মধ্যে রাস্তার পাশের পুরাতন কাপড় দিয়ে ঘেড়া টিনের খুপড়ি ঘরের বাঁশের তৈরী মাচার উপর পা নামিয়ে দিয়ে বসে ছিলেন বৃদ্ধ ইসমাইল শেখ। তখন তিনি জিকির করছিলেন। এগিয়ে গিয়ে কথা বলতেই দু’চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বলতে শুরু করলেন নিজের অতীত। তার অভিযোগ নিজের উপর। প্রায় এক ডজন সন্তান জীবিত থাকলেও কেউ তার দায়িত্ব নেননি। তিন বছর আগে দ্বিতীয় স্ত্রী হাবিয়া খাতুন তার সব নিয়ে বাবার বাড়ি চলে গেছেন। এ বছর সরকারের বয়স্ক ভাতার কার্ডের টাকায় দ্বীতীয় পক্ষের ছেলে সাদ্দামকে ৬ বস্তা চাউল কিনে দিয়েছেন। তাই সে রোজার ঈদের পর বৈশাখ মাস থেকে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত দিচ্ছেন।

বৃদ্ধ জানান, এতো বয়স হলেও তার অসুক বিশুক নেই। একটা বড়িও (ওষুধ) তার লাগে না। লাঠি ভর করে খুড়িয়ে খুড়িয়ে নিজের কাজ নিজেই করেন। রাতে বিছানায় শুলে হাত পায়ে ঝিঝি ধরে আসে। তাই ঘুমতে পারে না। ছেলে মেয়েরা তার খাবার দেয় না, দেখে না, এ নিয়ে কারো প্রতি কোন অভিযোগ নেই বৃদ্ধের। বৃদ্ধ হাত উচিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করেন তার চার পাশের ছোট এই চাকলা ধরে তারই সন্তানদের বসবাস। কখনো খুব খিদে পেলে যে কোন বাড়িতে গেলে তারা এক মুঠো খাবার দেয়। কিন্তু কেউ তার দায়িত্ব নেয় না। বৃদ্ধের সামান্য অনুযোগ দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার দুই মেয়ের প্রতি। তারাই নাকি বৃদ্ধের সব নিয়ে গেছে।

বৃদ্ধের ছবি তোলা দেখে নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে এলেন রজনি নামের এক গৃহবধূ। সাংবাদিক পরিচয় শুনেই থমকে গেলেন। জানালেন নিজেদের দৈন্যদশা কথা। দাবি কররেন শ্বশুরের জন্য সামর্থের মধ্যে সবই করেন।

ঝালুকাদহ গ্রামের সামসদ্দিন মন্ডল জানান, বৃদ্ধের অনেক সন্তান এখনো জীবিত। তাদের সবাই সংসার ছেলে মেয়ে আছে। কিন্তু কেউ বৃদ্ধের দায়িত্ব নেয়না। এখনো লাঠিতে ভর করে চলছে। বৃদ্ধ বিছানায় পরে গেলে তখন কি হবে।

বৃদ্ধের দ্বিতীয় স্ত্রী হাবিয়া খাতুনের সাথে কথা বলতে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে শোমসপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তবাড়িয়া যাওয়া হয়। সেখানে দেখা মেলেনি হাবিয়া খাতুনের। তিনি মাঠে গিয়েছেন। কখন ফিরবে তা বাড়ির কেউই জানেন না।

বৃদ্ধের এক ছেলে ওমর আলী কুষ্টিয়া জেলা সদরে রিকসা চালান। স্ত্রী সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকেন। গ্রামের বাবার জমি ভাগ করে নিয়ে তিন কক্ষের আধাপাতা ইটের দেওয়াল দিয়ে ঘর তুলছেন। তার পাশেই বৃদ্ধের খুপড়ি ঘর।

ছোট ছেলে সাদ্দাম আলী ঢাকায় রিকসা চালান। তার স্ত্রী রজনি খাতুন গ্রামেই বাস করেন। তিনিই বৃদ্ধের খাবার আর খোজ খবর নেন।

রজনি বলেন, তার স্বামী রিকসা চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়ে তাদের সংসার চলে না। নিজেরাই থাকার দুই চালের টিনের ঘরে। অনেক জাগায় দিয়ে পানি পরে। তার মধ্যে শ্বশুরে জন্য যতুটুকু সম্ভব তা করতে কুন্ঠা বোধ করে না ।

জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সকিব খান টিপু বলেন, বৃদ্ধ খুপড়ি ঘরে জীবন কাটান। তার জন্য সরকারী সহয়াতা সাথে সাথে খাবারের জন্য টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করেন থাকেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, বৃদ্ধের অনেক সন্তান আছে। তবে তারা সবাই দিন মুজুর শ্রেণির।