স্টাফ রিপোর্টার
ব্যবসায়ীর পরামশ্যে জমিতে ভুল কৃটনাশক ¯্রে করে ১০ কৃষকের ১২ বিঘা জমির আমন ধান পুড়ে নষ্ট হয়েছে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ী বলছেন, ৪ কৃষকের ক্ষতি হয়েছে। বিএনপি নেতারা সালিশী বৈঠকে কৃষককে বিঘা প্রতি ৭ হাজার টাকা ক্ষতিপুরণ সাব্যস্ত করেছেন।
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের ভবানীপুর মধ্যপাড়া ও চাঁদট গ্রামের এসব কৃষককের ২ লাখ টাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে। রবিবার দিন গত রাতে স্থানীয় বিএনপির নেতারা ওই কৃটনাষক ব্যবসায়ীর দোকানে সালিশি বৈঠকের আয়োজন করেন। ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকদের বিঘা প্রতি ৭ হাজার টাকা ক্ষতিপুরণের রায় ঘোষনা করা হয়েছে বলে বিএনপি নেতা ও সালিশের প্রধান কর্তা ঝন্টু বিশ্বাস মুঠো ফোনে স্বীকার করেন।
ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, গত সপ্তাহে চাঁদট বাজারের কৃটনাশক ব্যবসায়ী জাহিদ মন্ডলের পরামশ্যে আমন ধানের ক্ষেতে আগাছা নাশক ¯্রে করেন। দু’দিন বাদে ৩ নং ওয়ার্ডের ভবানীপুর মধ্যপাড়ার কৃষক আব্দুল কুদ্দুস, ৬ নং ওয়ার্ড চাঁদট গ্রামের কৃষক আনিস মোল্লা, হামিদুল্লাহ, টুটুল ও রহমত আলী সহ ১০ কৃষকের জমির ধান লাল হয়ে মরতে শুরু করে। ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকরা ওই কৃটনাশক ব্যবসায়ীর কাছে ছুটে যায়। তারা (ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকরা) বাদ প্রতিবাদ করলে রবিবার রাতে স্থানীয় বিএনপির নেতা ঝন্টু, নিয়ামত আলী, রেজাউল, আল আমীন, সিয়াম বিশ্বাস ও শহিদুল মাষ্টারের নেতৃতে কৃটনাশক ব্যবসায়ীর দোকানে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এই বৈঠকেই কৃষকদের ক্ষতিপুরণ হিসেবে বিঘা প্রতি ৭ হাজার টাকা ধার্য করা হয়।
সোমবার সকালে চাঁদট গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষক আব্দুল কুদ্দুসের সাথে তার পুড়ে যাওয়া ধানের জমির আইলে দাড়িয়ে কথা বলা হয়। অসহায়ের মত মারা যাওয়া ধান গাছ তুলে দেখান আর বলেন, “সবই পচে শেষ হয়ে গেছে”।
তার শঙ্কা ‘এ বছর ছেলে মেয়েদের পেট ভড়াবেন কি দিয়ে’। মহাজন অধিক লাভের আশায় তাদের নিন্মমানের ওষুধ দিয়েছেন। নিন্মমানের ওষুধে তার প্রায় দুই বিঘা জমির ধান পুড়ে গেছে। জমির আগাছা মারতে গিয়ে নিজের পরিবারের সদস্য মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলে দিলেন। বিএনপির নেতা সালিশ করেছেন তাই তিনি সহ্য করছেন।
তিনি জানান, ধান আবাদে বিঘা প্রতি এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার টাকা। এখন আর তেমন ব্যয় নেই। দুই বিঘা জমির আবাদে ১৮ হাজার টাকার বেশী ব্যয় করেছেন। এই জমিতে তার প্রায় ৩০ মন ধান হতো। যার বাজার মুল্য ৩৫ হাজার টাকা। আর নেতারা সালিশ করে বিঘা প্রতি ৭ হাজার টাকা ক্ষতিপুরণ দেওয়ার রায় ঘোষনা করেছেন। তিনি বিচারের ভার ওপড় ওয়ালার কাছে দিয়েছেন।
বর্গা চাষি আনিস মোল্লার জমির মালিক রাসেল হোসেন বলেন, সালিশে যে ক্ষতিপুরণ ধার্য করা হয়েছে তা ধান রোপণের খরচ হয়েছে। এখন জমির মালিক কি নেবে আর বর্গা চাষীকে কি দেবে?
উপজেলা কৃষি অফিসের নিয়েগকৃত সার ও কৃটনাশক ব্যবসায়ী জাহিদ মন্ডল ভূল ওষুধ দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেন। তার ভুলে ৪জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছেন দাবি করেন। স্থানীয় নেতাদের মধ্যস্ততায় কৃষকদের বিঘা প্রতি ক্ষতিপুরণ দিতে রাজি হয়েছেন বলেও জানান।
রবিবার রাতে সালিশী বৈঠকের পর বিএনপি নেতা ঝন্টু বিশ্বাস এই প্রতিবেদকে মুঠো ফোনে জানান, এর নিয়ে সংবাদ করার প্রয়োজন নেই। তারা ব্যবসায়ীর ঘরে কৃষকদের সাথে বৈঠক করেছেন। ওই ব্যবসায়ী ভুল বসত “উইডক্লিন” নামের ওষুধের পরিবর্তে “উইডনীল” নামের আগাছা নাশক দিয়েছিলেন। কৃষকদের ক্ষতির পরিমান সালিশী বৈঠকে ধার্যকৃত ক্ষতিপুরনের কয়েক গুন বেশী বলেও স্বীকার করেন এই নেতা।
দম্ভভরে বিএনপি নেতা ঝন্টু বলেন, সালিশে তার দলেই ৫/৬ জন নেতা উপস্থিত ছিল। এখন যেখানে যে সালিশ বৈঠক হচ্ছে তা শুধু বিএনপি নেতারাই করছেন বলেও জানান।
বেতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর ও আওয়ামী লীগের নেতা ফারুক হোসেন জানান, ভুল কৃটনাষক স্প্রে করে কয়েকজন কৃষক ক্ষতি শিকার হয়েছেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকদের নাম পরিচয় নিশ্চিত করেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, একজন কৃষক তাকে ফোনে অভিযোগ করে ছিলেন। তার জানা ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকের সংখ্যা একজন। এটা দোকানির ভুলেই হয়েছে বলেও তিনি স্বীকার করেন। তিনি ওই কৃষকে ক্ষতিপুরণ আদায় করে দেওয়ার জন্য একজন উপ সহকারী কৃষি কমকর্তাকে মৌখিক নিদেশও দিয়েছেন। আগামীতে ওই কৃষককে কৃষি প্রণোদনার আওতায় নেবেন বলেও জানান।
পরে ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে অবগত করা হলে তিনি পরিদর্শন করে বিস্তারিত জানাবেন বলেও জানান।