পঙ্গুত্বের কাছে হার না মানা খোকসার অমরেশ

0
88

স্টাফ রিপোর্টার

পঙ্গুত্বের কাছে হার না মানা অমরেশ অধিকারী। হাটে-ঘাটে ও ধর্মীয় উৎসব আঙ্গিনায় বাদাম-চানাচুর বিক্রি করেন। কিন্তু হাত পাততে রাজি নন তিনি। শারীরিক অক্ষমতার ফলে চানাচুর তৈরী করতে পারেন না। তাই আয়-রোজগার খুব কম হয়। তাদের ৫ জনের জীবন সংসার চলে অনাহারে-অর্ধাহারে।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জানিপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের একতারপুর গ্রামের মৃত অভিমান্য অধিকারীর ছেলে প্রতিবন্ধি অমরেশ অধিকারী। সাত বছর বয়সে পলিও রোগে তার দুটো পা হারিয়ে পঙ্গু হয়ে যায়। এভাবেই খুড়িয়ে খুড়িয়ে ১০ শ্রেণি পর্যন্ত পড়া লেখাও করেছেন। বছর দশেক আগে তার বাবার মৃত্যুর পর সংসারের জোয়াল এসে পরে তার কাঁধে। পঙ্গুত্তে¡র অভিশাপ নিয়ে জীবন যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেন। বাবার চানাচুর তৈরীর পেশাকে বেছে নেন। গ্রামের রাস্তার মোড়ে চানাচুরের দোকান দেন। সংসারের চাহিদা বাড়ায় ভ্যান চড়ে গ্রামের হাট-ঘাট ও ধর্মীয় উৎসব আঙ্গিনায় দোকান দিতে শুরু করেন। ভ্যান ভাড়া দিয়ে পোষায় না। কয়েক বছর আগে স্থানীয় ভাবে কাঠের চাকার তৈরী ছোট হুইল চেয়ারে দোকানের মালামাল নিয়ে চলা ফেরা করতে। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তি বাইসাইকেলের যন্ত্রাংশ দিয়ে একটি হুইল চেয়ার বানিয়ে দিয়েছিল সেটিও অকেজো হওয়ার পথে।

প্রতিবন্ধির বৃদ্ধা মা সবিতা রানী, দুই সন্তান ১০ বছর বয়সী অমিত ও সাত বছরের মেয়ে অন্যান এবং স্ত্রী পঞ্চমী রানী শর্মাকে নিয়ে বাবার ভিটার পুরাতন ঘরে বসবাস করছেন। এক কক্ষের পুরোনো দিনের ইটের তৈরী ঘরটিও জিন্নদশা হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতে ঘরের চালা দিয়ে পানি পরে সব ভিজে যায়। নিজের মা সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে অনেক রাত তাদের বসে কাটাতে হয়।

প্রতিবন্ধি অমরেশ অধিকারীর নিজের চলাচলের চাকাওয়ালা হুইল চেয়ারটি অতিশয় পুরাতন হয়ে গেছে। এর পেছনে মেরামত ব্যয়ও বেড়ে গেছে। গাড়িটি খারাপ থাকায় ঠিকমত হাট ঘাটে যেতে পারছেন না। তবুও সংসারের সবার খাবারের যোগান দিয়ে গিয়ে তাকে জলকাঁদা মারিয়ে ওই গাড়ি ঠেলে চলাচল করতে হচ্ছে।

প্রতিবন্ধি অমরেশের আশিতী বৃদ্ধা মা সবিতা রানী জানান, তার আরো চার ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। তারা সবাই অভাবি। অমরেশের চিকিৎসা করতে কলিকাতা পর্যন্ত গিয়েছেন। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে মাজা থেকে হাতা পর্যন্ত উন্নতি হয়েছিল। পরে আর টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন নি। ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তিনি সর্বশান্ত হয়েছেন। স্থানীয় এক লোকের তৈরী করে দেওয়া হুইল চেয়ার চালিয়ে হাটবাজারে যায়। আয়-রোজগার যা ছিল তা দিয়ে সংসার চলত। এখন আর চলছেনে না। সংসারে ব্যয় বেড়েছে। ছেলে একমাত্র বাহনটি বিকল হয়ে উপক্রম। বৃষ্টি এলেই ঘরের চালা দিয়ে দিয়ে পানি পরে। প্রতিবন্ধি ছেলে চলাচল ও ব্যবাসার মালামাল আনা নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কমকর্তাদের কাছে একটি ব্যটারী চালিত হুইল চেয়ারের দাবি করেন তিনি।

সোমবার দুপুরে প্রতিবন্ধি অমরেশের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। অনেক চেষ্টার পর খোকসা খেয়া ঘাটের উপরে পথের পাশে তার দেখা মেলে। চিনাবাদাম ও চানুচুর আর বুট ভাজার পসরা সাজিয়ে বসেছিনে এই প্রতিবন্ধি। ছাতা ধরে ইলশে গুড়ি বৃষ্টির থেকে নিজের দোকানের মালামাল রক্ষার চেষ্টা করছিলেন। ব্যস্ততার ফাঁকে নিজের সমস্যার কথা তুলে ধরেন তিনি।

তিনি জানান, সমস্যা থাকলেও এতদিন ভালোই ছিলেন। কিন্তু তার একমাত্র যান বাহনটির (হুইল চেয়ার) বয়স হয়ে গেছে। বসে চালাতে খুব কষ্ট হয়। তাই মাঝে মধ্যে বিকল পা দুটি মুড়ে দিয়ে শুধু মাজার উপর ভর করে হাতের জোর দিয়ে প্যাডেল করতে হয়। এক মাইল পথ চলতে তাকে কমপক্ষে দুই বার দম নিতে হয়। তার একটা গাড়ি খুবই প্রয়োজন। বাবার তৈরী করে দিয়ে যওয়া ঘরটির চালাদিয়ে পানি পরে। সরকারী সাহার্যের প্রতিবন্ধি ভাতার টাকা নিয়েও ছয় নয়ের শিকার হচ্ছেন। তার ইচ্ছা একটা সরকারী ঘরের। যেখানে রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমতে পারবেন।

জানিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মজিদ ওই প্রতিবন্ধির দূরাবস্থার বিষয়ে অবগত আছেন। তবে ছেলেটি কখনো তার কাছে সাহার্যের জন্য যায়নি।

তিনি আরো জানান, আগামীতে নিজের জমি থাকলে প্রধান মন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়ার প্রকল্পের চিঠি উপজেলাতে এসে গেছে। এই প্রতিবন্ধিকে সেই আওতায় ঘর দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।