কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার রাজিবুল ইসলাম (৩৯) নামের প্রবাস ফেরৎ এক যুবক সাত-সাত জন স্ত্রীকে এক ছাদের নিচে নিয়ে সুখে-শান্তিতে সংসার কর ছেন।
রাজিবুলের দাবি, সাত স্ত্রীর পরস্পরের মধ্যে কোন ঝগড়া-বিবাদ নেই। স্ত্রীরা মিলেমিশে থাকছেন একই বাড়িতে। রাজিবুলের ভাষ্য, মায়ের মানত পূরণ করতেই সাতটি বিয়ে করেছেন তিনি। রাজিবুলের এই সাত বিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
রাজিবুল ইসলাম কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের পাটিকাবাড়ি গ্রামের মিয়াপাড়ার আয়নাল মন্ডলের ছেলে। তিনি ১৫ বছর লিবিয়াতে ছিলেন। দুই বছর আগে দেশে ফিরেছেন। লিবিয়াতে থাকার সময়ই ১৯৯৯ সালে তিনি প্রথম বিবাহ করেন। এরপর একে একে করেন আরও ছয়টি বিয়ে।
রাজিবুলের স্ত্রীরা হলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হালসা গ্রামের রুবিনা খাতুন (৩৫), একই উপজেলার গোস্বামী দুর্গাপুর এলাকার মিতা আক্তার (২৫), কিশোরগঞ্জের হেলেনা খাতুন (৩০), রাজশাহীর চাপাই এলাকার নুরুন নাহার (২৫), চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকার স্বপ্না (৩০), একই উপজেলার ডম্বল পুর এলাকার বানু আক্তার (৩৫) ও কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ এলাকার রিতা আক্তার (২০)।
রাজিবুল ইসলাম জানান, আমি মা-বাবার একমাত্র ছেলে। জন্মের পর আমার একটা সমস্যা ছিল। সেজন্য আমার মা মানত করেছিলেন, ‘ছেলে বেঁচে থাকলে তাকে সাতটি বিয়ে দিবেন’। তাই মায়ের সেই মানত পূরণ করতে আমি সাতটি বিয়ে করেছি। এতে আমি, আমার পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয়রা সবাই খুশি। আমার সাত বউই খুব ভালো। স্ত্রীদের পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হয় না। সাত স্ত্রী ও ৫ সন্তান নিয়ে তিনি সুখে-শান্তিতে সংসার করছেন। সব স্ত্রীরা তাকে আদর যতœ করেন এবং খুব ভালোবাসেন। সারাদিন সবাই একসঙ্গে কাজ করেন। প্রতিদিন রাতে এক জন এক জন করে সাত জন স্ত্রীর কাছে থাকেন। এতে তার বা স্ত্রীদের কোনো সমস্যা হয় না।
তিনি আরও বলেন, আমি ১৫ বছর লিবিয়াতে ছিলাম। গত দুই বছর আগে দেশে এসেছি। বর্তমানে আমার একটি ড্রাইভিং শেখার সেন্টার আছে। এ ছাড়া কয়েকটি মাইক্রোবাস রয়েছে। আমি নিজেও ড্রাইভিং শেখায়।
জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে রুবিনাকে বিয়ে করেন রবিজুল ইসলাম। এই স্ত্রীর দুই ছেলে রয়েছে। এরপর লিবিয়ায় থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালে হেলেনাকে বিয়ে করেন। এ স্ত্রীর ঘরে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। করোনার সময় ২০২০ সালে নুরুন নাহারকে বিয়ে করেন। তারও এক মেয়ে আছে। ২০২২ সালে বিয়ে করেন স্বপ্নাকে। গত তিন মাসের মধ্যে তিনি বানু, রিতা এবং মিতাকে বিয়ে করেন। সবগুলো বিয়েই করেন পারিবারিকভাবে।
স্থানীয়রা জানান, রাজিবুল ইসলাম সাতটি বিয়ে করেছেন। সাত বউ নিয়ে একই বাড়িতে বসবাস করেন। সাত বউ মিলেমিশে সংসার করে। এলাকার মানুষ তাদের বাড়িতে বেড়াতে যায়। তারা ভালোই আছে।
তার স্ত্রীরা বলেন, আমরা সাত বোনের মতো। আমরা সারাদিন মিলেমিশে সংসারের কাজ করি। পারস্পরিক বোঝাপাড়া ভালো। বোনের মতো এক বাড়িতে সবাই বসবাস করি। কেউ কাউকে হিংসা করি না। কে কম কাজ করল বা বেশি করল, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। আমরা জেনে শুনেই বিয়ে করেছি। আমাদের স্বামী এমন কিছু করেন না যাতে আমাদের মন খারাপ হবে। স্বামী খুবই ভালো মানুষ।
রাজিবুলের এই সাত বিয়ে প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক উপাধ্য প্রবীণ আলেম মওলানা আব্দুল হালিম শরীফ বলেন, ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী ভরণপোষণ দেওয়ার সমতা রয়েছে এমন ব্যক্তি সর্বোচ্চ চার জনকে বিবাহ করে সংসার করতে পারেন। এর বেশি বিবাহ করার বিধান কোনভাবেই ইসলাম সম্মত নয়।
বৃহত্তর কুষ্টিয়া ওলামা পরিষদের সভাপতি মুফতি আব্দুল হামিদ বলেন, ইসলামী বিধান মতে, (শর্ত সাপে)ে ভরণ-পোষণ প্রদানে সম এবং শারীরিক সমতা রয়েছে এমন কোন ব্যক্তি সর্বোচ্চ এক সাথে চার জন স্ত্রী রাখতে পারবেন বা তাদের সাথে সংসার করার অনুমতি রয়েছে। এর অধিক বিবাহ করার অনুমতি ইসলামে নেই। চতুর্থ স্ত্রী থাকাবস্থায় পরবর্তীতে যতগুলো বিবাহ করবেন সেই বিবাহগুলো কোনভাবেই বৈধ হবে না। পৃথিবীর সমস্ত আলেমকে সামনে রেখে তাদেরকে বিবাহ করলেও সেই বিয়ে কোন অবস্থাতেই বৈধ হবে না। এটা রীতিমত পাপাচার বলেই গণ্য হবে।