খোকসায় বাবার ভ্যান চুরি: তিন শিশুর পড়া লেখা বন্ধের শঙ্কা

0
41

স্টাফ রিপোর্টার

জোহরের নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে বেড়িয়ে চালক লিটন আলী দেখলেন তার উপার্জনের একমাত্র বাহন পাখি ভ্যানটি চুরি হয়ে গেছে। তিন দিনেও চুরি যাওয়া ভ্যানটি উদ্ধার করতে পারেনি তিনি। ফলে ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ভ্যান চালকের তিন শিশু সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

খোকসা উপজেলা সদরের পৌর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কালীবাড়ি পাড়ার বাসিন্দার মৃত আয়ুব আলীর ছেলে লিটন আলী বিশ্বাাস। গত মঙ্গলবার দুপুরে খোকসা বাজার জামে মসজিদের পাশে নিজের পাখি ভ্যানটি তালা দিয়ে রেখে জোহরের নামাজ পড়তে যান। নামাাজ শেষে মসজিদ থেকে বেড়িয়ে দেখেন তার পাখি ভ্যানটি চুরি হয়ে গেছে। চুরি যাওয়া ভ্যানটি উদ্ধারে অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু ভ্যান উদ্ধার করতে পারেনি।

নিজের একচিলতে জমির উপর আধাপাকা তিন কক্ষের একটি ঘর আছে লিটনের। বৃদ্ধা মা কমেলা খাতুন, নিজের স্ত্রী মুসলিমা খাতুন আর তিন সন্তান সন্তানসহ ৬ জনের সংসারের একমাত্র উপার্জনের বাহন ছিল ঋণের টাকা কেনা পাখি ভ্যানটি। ভ্যানটি চুরি যাওার পর বাড়িতে অলস সময় কাটাচ্ছেন তিনি। স্ত্রী ও বৃদ্ধা মা ববিনে সুতা তুলে যা আয় করছেন তাই দিয়ে এক বেলা পর একবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। “মরার উপর খাড়ার ঘা” হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘর তৈরী ও ভ্যান কেনার সময় সমিতি থেকে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে। সপ্তাহে চারটি সমিতির কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হয় তার।

ভ্যান চালক লিটনের বড় ছেলে ইসমাইল বিশ্বাস দশম শ্রেণি ছাত্র। মেয়ে মিম খাতুন ৮ম ও মাসুরা প্রথম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। শিশুরা মেধাবীও। পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস্য ভ্যানটি চুরি যাওয়ার পর তাদের খাবার ও শিক্ষা দুই অনিশ্চিত হয়ে গেছে।

শুক্রবার দুপুরে ভ্যান চালক লিটনের বাড়িতে সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, আগের রাতের বেঁচে থাকা সামান্য কিছু পান্তা ভাত সকালে সবাই ভাগ করে খেয়েছেন। দুপুরের রান্নার চাউল সদাই কিছুই নেই। টানা বৃষ্টির কারণ আগের রাতে ববিনে সুতা ভরা হয়নি। ফলে আজ মহাজন টাকা দেবে না। ঘরে খাবার কেনার টাকা নেই।

দশম শ্রেণির ছাত্র ইসমাইল বিশ্বাাস জানান, কয়েকদিন পর তার এসএসসি পরীক্ষার ফরম পুরন করতে হবে। ভ্যানটি চুরি হওয়ায় তার হতো এসএসসি পরীক্ষার ফরম পুরণ করা হবে না। ফলে তার ছাত্র জীবনের ইতি টানতে হবে। সে আরও জানায় বাজারের বিভিন্ন দোকানের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে চোরকে চেনার চেষ্টা করেছে। প্রশাসন চাইলে তারদের চুরি যাওয়া ভ্যানটি উদ্ধার করা সম্ভব।

ভ্যান চালকের বৃৃদ্ধা মা কমেলা খাতুন জানান, ছেলে ভ্যান চালায় আর আমরা শ্বাশুরী-বৌ সুতার কাজ করে যা আয় করেন তা দিয়ে কোন রকম দিন চলে। ভ্যানটি চুরি যাওয়ার পর তাদের দিন যাচ্ছে খেয়ে না খেয়ে।

ভ্যান চালক লিটন বিশ্বাস জানান, ভ্যানের চোর সনাক্ত করতে সে বাজারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভির ফুটেজ দেখেছে। মসজিদের পাশের একাধিক ক্যামেরায় চোরকে ভ্যান নিয়ে পালাতে দেখা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন – আবরার ফাহাদের বাবা-মা ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে যা বললেন

তিনি ভ্যান পাওয়ার আশা থানায় অভিযোগ করে ছিলেন। কিন্তু কোন লাভ হনি। এখন একদিকে সংসার চালানো ও শিশুদের লেখাপড়ার খরচ অন্যদিকে সমিতির কিস্তির টাকা পরিশোধ করা নিয়ে চাপেই মধ্যে পরেছেন।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মঈনূল ইসলাম বলেন, চোর ধরতে বৃহস্পতিবারও অভিযান চালানো হয়। কিন্তুু ফুটেজের সাথে সন্দেহভাজনের মিল না হওয়ায় কাজ হয়নি। তবে অভিযান অব্যাহত চলছে।