মুক্তিযোদ্ধার নির্মানাধীন ঘর ভেঙ্গে দেওয়ার অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে

0
58

প্রতিবাদ করায় মুক্তিযোদ্ধার পরিবারসহ তিন পরিবার ঘরবন্ধি

স্টাফ রিপোর্টার

কুষ্টিয়ার খোকসায় বীর মুত্তিযোদ্ধা মোঃ রফিকুল আলম তালমের ইজারাকৃত জমি মাটি ভরাট করে দখল নেওয়ার পর এবার প্রকাশ্যে নির্মানাধীন ৯৯ ফুট লম্বা ঘর ভেঙ্গে জমিদখল নিয়েছে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিবের ভাই ও উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান কাজল। মুক্তিযোদ্ধার পরিবারসহ তিন পরিবার জীবন ভয়ে ঘরবন্ধি হয়ে রয়েছেন। ওসি বললেন ওরা কারো কথা শোনো।

ভুক্তভোগী ও এলাবাসীদের সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল থেকে বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব আনিসুজ্জামান স্বপনের বড় ভাই উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান কাজলের নেতৃত্বে ৪০/৫০ জন উঠতি বয়সের যুবক খোকসা রেল স্টেশন এলাকায় তান্ডব শুরু করে। হামলাকারীরা সকালেই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রফিকুল ইসলাম তালম, মৃত সাইদুল ইসলামের স্ত্রী দিলরুবা রহমান ও তার বোন আঞ্জুদিলারা বেগমের পরিবারকে ঘরবন্ধি করে ফেলে সন্ত্রাসীরা।

এর পরেই খোকসা রেল স্টেশনের প্লাট ফর্মের পূর্ব পাশের ৯৯ ফুট লম্বা মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম তালের নির্মানাধীন দুই চালা টিনের ঘরটির ভেঙ্গে ফেলে। এর পর আঞ্জুদিলারা বেগমের ৮টি দোকান ঘরের সামনের বারান্দা ভেঙ্গে ফেলে। অসুস্থ বিধবা দিলরুবা রহমানের বসত বাড়ির একটি সেড ও দেয়াল ভেঙ্গে ফেলে। হামলাকারী বিএনপির নেতার সন্ত্রাসী বাহিনী প্রায় দুই ঘন্টা ধরে এলাকায় তান্ডব চালায়। পরে পুলিশ ও বিডি পুলিশ ঘটনা স্থলে পৌচ্ছে হামলাকারীদের তান্ডব থামায়।

সোমবার সকালের দফায় দফায় ভাংচুরের ঘটনার পর থেকে ভয়ে ঘরবন্ধি হয়ে পরেছেন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার সহ অন্য দুই পরিবার। হামলার ভয়ে তারা বাড়ি থেকে বেড় হচ্ছেন না।

সোমবার ঘটনার পরপরই সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, খোকসা রেল স্টেশনের প্লাট ফর্ম শেষ প্রান্তে মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম তালমের নির্মানাধীন সবুজ টিন দিয়ে ছাউনি দেওয়া ঘরটি মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ঘরের প্রায় ৪০টি সিমেন্টের খুটির অধিকাংশই ভাঙ্গা হয়েছে। স্টেশনের বিপরিত দিকে পাকা রাস্তার পাশের প্রায় ৭/৮টি দোকানের সামরে বারান্দার খুটি গুলো ভেঙ্গে দেওয়ো হয়েছে। দিলরুবা রহমানের বাড়ির সামরে ও পাশের দেওয়াল ভাঙ্গা পরে আছে।

বীর মুত্তিযোদ্ধা মোঃ রফিকুল আলম তালম জানান, রবিবার রাতে থানায় বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান কাজলের সাথে বৈঠক হয়। সেখানে থানার ওসি দুই পক্ষকেই কাজ বন্ধ রাখার অনুরোধ করেন। কিন্তু সকাল হতে না হতেই মনিরুজ্জামান কাজলের নেতৃত্বে ৪০/৫০ জন সন্ত্রাসী তার নির্মানাধীন ঘরটি রশি বেঁধে ভাঙ্গে ফেলে। এ সময় তিনি থানার ওসি ও ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করেছিলেন। ফোন পেয়ে পুলিশ ও ডিবি পুলিশের পৃথক দল ঘটনা স্থলে এসে হামলাকারীদের শান্ত করে। এ ভাংচুরের পর তিনি বা তার পরিবারের লোকেরা হামলার ভয়ে বাড়ি থেকে বেড় হচ্ছেন না।

হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ আঞ্জুদিলারা বেগমের ছেলে সাবেক বিজিবি সদস্য দেলোয়ার আজিজ দিলু জানান, আগের রাতে থানা থেকে ফিরে মনিরুজ্জামান কাজল তাদের ৮ জন ভারাটিয়াকে দোকান গুলোর বারান্দা পরিস্কার করতে নির্দেশ দেন। সকালে তার মা ও স্ত্রী রাস্তায় হাটতে বেড় হয়। তখন কাজলের লোকজন তাদের বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য করে। এর পর ভাংচুর হয়েছে। পুলিশ এসেছে তারা আর বাড়ি থেকে বেড় হওয়ার সাহস পায়নি। একরম ঘর বন্ধি হয়ে রয়েছেন।

উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান কজলের সাথে কথা বলার জন্য তার মুঠো ফোনে কল দেওয়া হয়। তিনি ফোনটি রিসিভ করলেও কথা বলেনি। তার নিকট ছোট ভাই উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব আনিসুজ্জামানের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, তিনি শুনেছেন এলাকার লোকজন রস্তার জমি ক্লিয়ার করেছে। ওই মুক্তিযোদ্ধা গ্রাম থেকে উঠে আসা একটি রাস্তার মাথায় ঘর তুলে রাস্তা বন্ধ করেছিলেন। রাস্তাটা প্রয়োজনও ছিলো। মনিরুজ্জামান কাজল এ সাথে জড়িত না। ।

খোকসা রেল স্টেশনের পূর্ব ও উত্তরে প্রায় ১০০ লম্বা ব্যানিজিক ও প্রায় ১০০ ফুট লম্বা কৃষি জমি তার স্ত্রী আরিফা খাতুনের নামে ইজহারা নিয়ে ভোগদখল করে আসছিলেন। ৫ আগস্টের পর উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান কাজলের চোখ পরে। তিনি জমি দখলের পায়তারা শুরু করে। সম্প্রতি তিনি ব্যক্তি উদ্দোগে গ্রামবাসীর কথা বলে তার গোটা জমি দখলের চেষ্টা করছে। ইতেমধ্যে তারা প্রায় ১০০ ফুট লম্বা একটি জমিতে মাটি ফেলে দখল নিয়েছেন। সোমবার সকালে দফায় দফায় ভাংচুরা করা হয়।

আরও পড়ুন – সরকারী কলেজের ১৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ নাইমুল ইসলাম সোমবারের হামলা ও ভাংচুরের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আগের রাতে তিনিও দুই পক্ষকে কাজ বন্ধ রাখার অনুরোধ করেছিলেন। আসলে ওরা দুই তিন ভাই কারো কথা শোনেনা। এ ঘটনায় মামলা হয়নি।