বিএনপি’র অভিযোগ বক্সে এবার জমা পড়ল ৭ অভিযোগ

0
32

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে স্থাপিত বিএনপির অভিযোগ বাক্সে গত এক সপ্তাহে ৭ টি অভিযোগপত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে ভেড়ামারা প্রেসক্লাবে তালা, দোকান ও জমি দখলের অভিযোগ উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির স্থাপিত অভিযোগ বাক্স খুলে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ বক্স খুলে অভিযোগপত্র সংগ্রহের সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার, প্রেসক্লাবের সভাপতি আল মামুন সাগর, সেক্রেটারি আবু মনি জুবায়েদ রিপন প্রমুখ।

একটি অভিযোগপত্রে ভেড়ামারা প্রেসক্লাব তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পর দীর্ঘ এক বছর এক মাস কতিপয় সাংবাদিক ভেড়ামারা প্রেসক্লাবকে নিজের সম্পত্তি মনে করে তালাবদ্ধ করে রেখেছে। আওয়ামী সরকারের সময় উপজেলা সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম চুন্নুর মদদপুষ্ট কতিপয় সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানটিতে তালা লাগিয়ে দেয়।

সাংবাদিকের পক্ষ থেকে অবিলম্বে ভেড়ামারা প্রেসক্লাবের তালা খোলার দাবি জানানো হয়।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক খোন্দকার রাশিদুল ইসলাম তার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন যে, উজানগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বজুল মন্ডল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে আমার এবং আমার পরিবারের নামে মিথ্যা হয়রানিমুলক মামলা দিয়ে জেল জরিমানা করে আপসের নামে আমার মার্কেটের প্রথম দোকানঘর চুক্তি নামায় লিখে নেই। আমার তিন প্রজন্ম বিএনপি সমর্থিত এবং আওয়ামী আমলে কোন ফ্যাসিস্টের কাছে আত্মসমর্পণ করিনি। বিধায় প্রশাসন এবং গন্যমান্য ব্যক্তিরা এই অন্যায়ের কোন সমাধান করেনি। তাই নিজের অস্তিত্ব বাঁচাতে দোসরের শর্ত মতে দোকান-ঘর চুক্তি নামায় লিখে দিই কিন্তু এখন এগারো মাস যাবত বজুল মন্ডল এবং তার ছেলে আমার দোকান ভাড়া দেইনা এবং ভাড়া চাইতে গেলে আমার লাশ হাওড়ে-বাওড়ে ফেলে রাখা এবং রাস্তায় দড়ি বেধে টেনে নিয়ে বেড়ানোর হুমকি দেই। উল্লেখ্য যে আমার মার্কেটের পেছনের দোকান গুলোতে আমি নিজে ব্যবসা করি। আমার সামনের দোকানটা না থাকায় ক্রেতা কম আসে এবং আমি লসের সম্মুখীন হচ্ছি এবং অভিযুক্ত নানা ভাবে আমার ব্যবসায় সমস্যা সৃষ্টি করছে। এলাকায় গন্যমান্য ব্যক্তির কাছে অভিযোগ দিয়েও সমাধান পাচ্ছি না। ফ্যাসিস্টের এই অন্যায়ের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করুন। আমি এই সমস্যার সমাধান চাই।

ছেউড়িয়া গ্রমের একজন বাসিন্দা তার অভিযোগপত্রে লিখেছেন যে, আমার এইখানে দবির মোল্লার গেটের সাথে একটি জমির এস.এ ১০৪৮ দাগের মামলা চলছে। মামলাটি আমি ফারুক বনাম জালাল বেপারী। জালাল বেপারী আবার আমির হোসেন বাচ্চুর সাথে এই জমি এওয়াজ করেন। এই মামলা চলমান অবস্থায় তৃতীয় পক্ষ হেলাল বাচ্চুর নিকট থেকে বায়নামা করেছে বলে সে সোহাগ মোল্লা ও তার ভাই সুমন মোল্লা সহ আরও অনেক ছেলে এনে এই জমি দখল করিতে যাই। সোহাগ মোল্লা ও সুমন মোল্লা বিএনপি নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে জমি দখল করিতে এসেছিল। আমি এই সমস্যার সমাধান চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিযোগ তুলেছেন যে, মাসুদ রুমি কলেজের সামনে ট্রাক মালিক সমিতির জায়গা দখল করা হয়েছে। সৈয়দ মাসুদ রুমি কলেজের প্রিন্সিপাল সজল চোধুরী ও ভাইস প্রিন্সিপাল শরিফুল ইসলামের সাথে করে কয়েকজনের নেতৃত্বে ট্রাক মালিক সমিতির জমি জোর করে দখল করা হয়েছে। তারা দোকান ঘর নির্মান করছে। বিনিময়ে কলেজ থেকে একটা দোকান করলে ৬০ হাজার টাকা করে মুনাফা পাই। দখলবাজরা গত ৬ সেপ্টেম্বর বেলা ১১ টার দিকে কলেজের সামনে পশ্চিমে থাকা দোকানদার মিন্টু, আমদ আলী, রাসেল, সমির তাদের জোর করে হুমকি ধামকি দিয়ে কলেজের মিটিং আছে বলে নিয়ে গিয়ে দুই লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। কলেজের জমির উপর থাকতে হলে এই টাকা দেওয়া লাগবে। না হলে দোকান ঘর উচ্ছেদ করা হবে। সেই সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন দিয়ে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ঐ মাঠে থাকা সকল ট্রাক আমার বাপের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপর গাড়ি রাখতে হবে বলে হুমকি দিচ্ছে। তারা এলাকায় ব্যাপক চাঁদাবাজি ও অবৈধভাবে বিচার শালিস করে তারা তিন ভাই মিলে অবৈধ টাকা ইনকাম করছে। এদের জন্য এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না। তাদের কারণে বিএনপির ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই কুষ্টিয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিষয়ে জানতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অভিযোগ বাক্স স্থাপন করে জেলা বিএনপি। কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের নিচে ফটকের পাশে এটি স্থাপন করেন বিএনপির কুষ্টিয়া জেলা শাখার আহ্বায়ক কুতুব উদ্দীন আহমেদ ও সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার। যে কেউ নাম পরিচয় গোপন রেখে সুনির্দিষ্ট অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেন।