ধর্ষককে জুতাপেটা করে সালিশ শেষ করেন জামাতের নেতারা

0
31

স্টাফ রিপোর্টার

কুষ্টিয়ার খোকসায় তৃতীয় শ্রেণির স্কুল ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনে ঘটনা চাপা দিয়ে দলীয় সমর্থককে রক্ষায় সালিশে রফা করার অভিযোগ উঠেছে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে। সালিশ প্রক্রিয়া ও ধর্ষীতার পরিবারের অসন্তুষ্টির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে (ভিডিওতে) জামায়াতের এক নেতার বলতে শুনা যাচ্ছে “ধর্ষকের অভিভাকরা চর থাপ্পর দিয়ে পিটিয়ে ঠিক করে দিয়েছেন”।

ধর্ষন ঘটনার সাত দিন পর সোমবার দুপুরে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বীকার করেন, রবিবার রাতে ধর্ষীত শিশুর পিতাকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে দিয়ে মামলা করানো হবে। এদিন রাত আট টায় তিনি জানান ধর্ষনের ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদি হয়ে মামলা করেছে। ( খোকসা থানার মামলা নং ৫, তারিখ ২০ অক্টোবর ২৫ ইং।) মামলায় এক মাত্র আসামী করা হয়েছে ধর্ষক আমীর হোসেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়ানো ভিডিও থেকে জানা গেছে, খোকসা উপজেলার গোপগ্রাম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃতীয় শ্রেণির স্কুল ছাত্রী ধর্ষনের ঘটনা ঘটে ১২ অক্টোবর দিনের বেলায়। এ ঘটনায় ১৩ অক্টোবর রাত ১০টার পর ধর্ষক আমীর হোসেন (৬৩) এর বাড়িতে সালিশী বৈঠক করা হয়। এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জামায়াতের আমীর মোঃ নজরুল ইমলাম, গোপগ্রাম ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর আলতাফ হোসেন, স্থানীয় মুরশিদ, দুখু মিয়াসহ একটি দল। এক পর্যায়ে ধর্ষক আমীর হোসেনকে জুতা পেটা করে সালিশ শেষ করা হয়। সালিশকর্তারা ধর্ষনের ঘটনায় অভিযুক্ত বৃদ্ধ আমীর হোসেন ও শিশুর বক্তব্য মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেন।

সূত্র জানায়, শিশু ধর্ষক আমীর হোসেন গোপগ্রাম ইউনিয়ন জামায়াতের সমর্থক। তার ছেলেও শিবির করতো।

এ ধর্ষনের বিচার নিয়ে অসন্তোস প্রকাশ করেন ধর্ষীত শিশুর বাবা ও মাসহ একাবাসী। তারা এঘটনার একমাত্র অপরাধীর সুষ্ট বিচারের দাবি করেন। কিন্তু সালিশ কর্তাদের ভয়ে তারা সবাই থেমে যায়। তবে ধর্ষন ঘটনার ৬ রবিবার দিন পর রবিবার রাতে থানা পুলিশ ধর্ষীত শিশুর বাবাকে থানায় নিয়ে আসে। সোমবার এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ধর্ষককে আটক করার সম্ভব হয়নি।

সম্প্রতি ধর্ষীত শিশুটির বাবা মা’র বিচার চাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল ভিডিওতে ধর্ষীত শিশুর মাকে বলতে শোনা যায়, ধর্ষকের যে বিচার হয়েছে তাতে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। এমন লোকদের দিয়ে বিচার করিয়েছেন, যেখানে কথা বলার সুযোগ নেই। তিনি বিচার দাবি করেন।

এ ভিডিওতে শিশুটির চাচিকে বলতে শোনা যায়, ঘটনার দিন তিন শিশু স্থানীয় মাদ্রাসার ছাদে বসে খেলা করছিলো। সেখানে আমীর হোসেন হাজির হয়। শিশুদের ভুলিয়ে ভালিয়ে মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও দোখায় বৃদ্ধ আমীর হোসেন। এক পর্যায়ে অন্য শিশুরা পালিয়ে যায়। কিন্তু লালসার শিকার হয় তার ভাতিঝি ওই তৃতীয় শ্রেণির শিশু। তাকে (শিশুটিকে) বাড়ি নিয়ে গিয়ে যৌন নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে শিশুটি বাড়ি ফিরে তাদের ঘটনা জানায়। এ নিয়ে তারা থানায় যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ধর্ষক তার রাজনৈতিক দলের লোকদের দিয়ে সালিশে বসতে বাধ্য করে। সালিশ রায় তারা মানতে পারেনি। কিন্তু কার কাছে বিচার চাইতে যাবেন। যেখানে যাচ্ছে সেখান থেকে ফিরে আসতে হচ্ছে।

ধর্ষকের স্ত্রী শিউলি খাতুন ওই ভিডিওতে বলেন, তার স্বামী মাপ চেয়ে নিয়েছেন।

ধর্ষকের ছেলে নাজমূল হোসেন বলেন, তাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে। কথিত ধর্ষীতা শিশুর বাবার সাথে তাদের জমি নিয়ে বিরোধ আছে। তাই শিশু ধর্ষনের নাটক সাজিয়েছে।

উপজেলা জামায়াতের আমীর নজরুল ইসলাম ভিডিওতে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি জানান, “ধর্ষনের ঘটনা সালিশ হয় না। দুই পক্ষ তাকে ধরায় বিষয়টি নিয়ে সালিশে বসেছিলেন। আমীর হোসেনকে তার পরিবারের মুরব্বিরা চরথাপ্পর দিয়ে মিটমাট করে নিয়েছে”।

গোপগ্রাম ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর আলতাফ হোসেন এই প্রতিনিধির কাছে স্বীকার করেন তিনিসহ তার দলের উপজেলা নেতা সালিশে ছিলেন। শিশুর জবানবন্দি শুনেছিলেন। ঘটনাটি ধর্ষনের চেষ্টা হয়েছিল বলেও স্বীকার করেন।

এ ভিডিও বক্তব্যের বিষয়ে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর নজরুল ইসলামের সাথে কথা বলা হয়। তিনি ভিডিওর বক্তব্য স্বীকার করেন। সালিশের বিষয়টিও স্বীকার করেন। তবে সালিশের পর শিশুর বাবাকে থানায় পাঠাতে চেয়ে ছিলেন কিন্তু তিনি থানায় যেতে রাজি হননি বলেও দাবি করেন।

তিনি আরও জানান, আমীর হোসেন তাদের দলের কেউ না। তার ছেলে একসময় শিবির করতো। সে ডানপিঠে হওয়ায় হওয়ায় তাকে দলে রাখা হয়নি।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মঈনুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ওই শিশুর একটি বক্তব্যের ভিডিও তার কাছে আসার পর তিনি সেখানে পুলিশ পাঠিয়েছিলেন। শিশুটির বাবা জানিয়েছেন ধর্ষনের ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় পুলিশ একটা ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরী করেছে।

ওসি আর বলেন, এ অপরাধ সালিশ যোগ্য নয়। স্পর্শ কাতর বিষয়টি তিনি আরও ভালো করে খতিয়ে দেখবেন। আরও সেখানে পুলিশ পাঠানো হবে বলেও জানান।

সোমবার দুপুরে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে এ বিষয়ে কথা বলা হলে তিনি স্বীকার করেন ধর্ষীতা শিশুর বাবাকে থানা আনা হয়েছে। তিনি এখান মামলা করবেন। আসলে মেয়ে পক্ষ এ ঘটনায় টাকা হাতানোর চেষ্টা করছিল। মামলা রেকর্ডের পর আসামী ধরার উদ্যোগ নেবেন।

সোমবার রাত আট টায় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সর্বশেষ আপডেট জানিয়ে বলেন, এ দিন দুপুরেই শিশুটির বাবা বাদি হয় মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় আসামী করা হয়েছে ধর্ষক আমীর হোসেন।তিনি আরও বলেন, “দুই এক বেলার মধ্যে ধর্ষককে আটক করা হবে”।