প্রতিবন্ধি হয়েও প্রতিমাসে আয় ৫০ হাজার টাকা

0
172
fahim-droho

নিজস্ব প্রতিবেদক:

শুধু মাথা ও ডান হাতের দুটি আঙ্গুল ছাড়া সবই অসাড় ফাহিমের। সেগুলোই কাজে লাগিয়ে আউটর্সোসিংয়ের মাধ্যমে প্রতিমাসে গড়ে ৫০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। শুধু সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আননেনি এই যুবক। তার অর্জিত অর্থ দিয়ে মাগুরা শহরে জমি কিনে বাড়ি করে মা-বাবার জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছেন এই যুবক।

ফাহিমের বাবা রেজাউল করীম। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিপনন কর্মী। তিনি জানান, মাগুরা শহরের ভায়না পিটিআই পাড়ার ভাড়াবাসায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি বসবাস করে আসছিলেন। টানাটানির সংসার হলেও ভালভাবেই কাটছিল তাদের দিন। কিন্তু ২০১২ সালে জেএসসি পরীক্ষার আগে হঠাৎ করেই শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে একমাত্র ছেলে ফাহিম। চিকিৎসকরা জানান, ডুচেনেমাসকিউলার ডিসথ্রফি রোগে আক্রান্ত ফাহিম। কিন্তু জিনেটিক এ রোগে তেমন কোন চিকিৎসা নেই দেশে-বিদেশে কোথাও। জটিল এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ধীরে-ধীরে হাত-পাসহ গোটা শরীর শুকিয়ে প্রতিবন্ধিতার শিকার হতে থকে ফাহিম। এক পর্যায়ে হাতের দুটি অঙ্গুল ও মাথা ছাড়া গোটা শরীর অচল হয়ে যায় ফাহিমের। অসুস্থ শরীরে ফাহিম তার হাতের মাত্র সচল দুটি অঙ্গুল দিয়ে অনলাইনে কাজ করে মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় করছে। গোটার সংসারের ভার এখন তার ওপর। এছাড়া ফাহিম মাগুরা শহরের জমি কিনে বাড়ি করে তাদেরও মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে।

ফাহিমুল করীম জানান, বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তার জীবনের অনুপ্রেরণা। মনোবল, প্রবল ইচ্ছাশাক্তি, ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে তিনি এখন দেশসেরা একজন ফ্রিল্যান্সার। ২০১৬ সালে অন্যের সহযোগিতা, নিজের প্রাইভেট পড়িয়ে জমানো টাকা ও ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে তিনি একটি ল্যাপটপ কেনেন। এরপর ইন্টারনেটে গুগল ও ইউটিউব ঘেঁটে বিভিন্ন কাজ শিখে নেন। ২০১৭ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইন মার্কেটে ফাইবারে গিগ খুলে কাজ খুঁজতে থাকেন। কয়েকদিনের মধ্যেই ৫ ডলারের একটি কাজ পেয়ে যান। অল্প সময়ের মধ্যে সফলভাবে কাজটি করার জন্য বায়ার তাকে আরো ১০ ডলার বোনাস দেন। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ফাহিমকে। প্রথমে ব্যানার ও বিজেনস কার্ড দিয়ে কাজ শুরু করলেও তিনি এখন সব ধরনের কাজই করে থাকেন। কাজের দক্ষতার কারণে এখন ফাইবারে লেভেল টুতে টপ রেটেড আপওয়ার্কার তিনি। বর্তমানে বিশ্বের ৩০ থেকে ৩৫টি দেশের বায়ারদের সঙ্গে করছেন। অর্ডার এতো বেশি যে, দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সময় দিলেও কাজ শেষ হবে না।

ফ্রিল্যন্সার হিসেবে কাজ করে গত ৪ বছর ধরে ফাহিম মাসে গড়ে ৫০ হাজার টাকা করে আয় করছেন। তার উপার্জনে পরিবারে স্বচ্ছলতা এসছে। বোনের লেখাপড়া চলছে। আগে ভাড়া বাসায় থাকলেও এখন শহরের মোল্লা পড়ায় জমি কিনে বাড়ি করেছেন। বর্তমানে সেই বাড়িতে ফাহিম পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন। ফহিমও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের প্রতি সহায়তা কমনা করছেন।

রেজাউল করিম বলেন, পুরোপুরি সুস্থ না হলেও দেশের বাইরে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার করাতে পারলে ফাহিমের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হতো। তিনি এ জন্য সরকারের সহায়তা কমানা করেছেন।