কুমারখালীতে স্ত্রীর বড় ভাইকে কুপিয়ে হত্যা, আহত ৫

0
86

কুমারখালী প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পাওনা টাকা ও পানির মেশিনের ভাগের ধানকাটার জেরে স্ত্রীর বড় ভাইকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার (১৮ মে) সকাল ৭ টার দিকে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের খোর্দ্দবন গ্রামে এঘটনা ঘটে। এঘটনায় নিহত ইউনুস আলীর দুই ছেলেসহ আরো অন্তত ৫ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির নাম ইউনুস আলী (৬০)। তিনি কুমারখালীর শিলাইদহ ইউনিয়নের খোর্দ্দবন গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে। তিনি পেশায় কৃষক ছিলেন। আহতরা হলেন – নিহত ইউনুস আলীর ছেলে রাসেল হোসেন ( ২৮) ও হোচেন আলী (২২), রকিবুল ইসলাম (৪০), চাঁদ আলী (৪৫) ও অরুন আলী (৪২)। তাঁরা কুমারখালী ও কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

অভিযুক্ত ভগ্নিপতির নাম মো. মোক্তার হোসেন (৫৫)। তিনি একই ইউনিয়নের মাঝগ্রাম গ্রামের মৃত হাচেন আলীর ছেলে।

জানা গেছে, প্রায় দুই বছর পূর্বে মোক্তার হোসেনের মেয়ে জ্যোতির (১৬) সঙ্গে নিহত ইউনুসের ছেলে মোঃ হোসেন আলীর (২২) প্রেমের সম্পর্ক করে বিয়ে হয়। তবে বিয়ের পর সংসারে বনিবনা না হওয়ায় দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা মিটিয়ে তাঁদের পারিবারিকভাবে ডিভোর্স হয়। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী ছেলের বাবা ইউনুস টাকা পরিশোধ করেননি মেয়ের বাবাকে। এনিয়ে দুপক্ষের বিরোধ চলছিল।

আরো জানা গেছে, খোর্দ্দবন মাঠে নিহত ইউনুসের একটি পানি সেচ প্রোজেক্ট রয়েছে। সেখানে মেয়ের বাবা মোক্তারের ধানক্ষেতের জমি আছে। ইউনুস উক্ত ধানক্ষেতে পানির সেচবাবদ ধানের ভাগ চাইলে মেয়ের বাবা মোক্তার বলেন, আগে পাওনা টাকা দাও, তার পরে তোমার পানির ভাগের ধান দেব। এনিয়ে কয়েকদিন ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এক পর্যায়ে ১৬ মে সকালে ইউনুস লোকজন নিয়ে ভাগের ধান কাটতে গেলে অভিযুক্ত মোক্তার ও তাঁর লোকজন বাঁধা দেন। পরে ওইদিন বিকেলে মোক্তারকে প্রধান আসামি করে তিনজনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ইউনুস। লিখিত অভিযোগের একদিন পরে শনিবার (১৮ মে) সকালে ইউনুস আলী তাঁর লোকজন নিয়ে জোর করে ধান কাটা শুরু করেন। সেসময় মোক্তার দেশীয় অস্ত্র হাসুয়া, বেকি, কাঁচি, রামদাসজ তাঁর লোকজন নিয়ে অতর্কিত হামলা করলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির ছেলে হোচেন আলী জানান, সকালে পানি সেচের ভাগের ধান কাটতে গেলে তাঁর মামা মোক্তারসহ ২০ -২৫ জন দেশীয় অস্ত্র কাঁচি, রামদা, হাসুয়া নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় তাঁর বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনিসহ অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। তিনি থানায় মামলা করবেন।

দুপুরে সরেজমিন মাঝগ্রাম গিয়ে দেখা যায়, মোড়ে মোড়ে পুলিশের অবস্থান। কয়েকটি ভ্যানে সাজানো রয়েছে আসামিপক্ষের ফ্রিজসহ আসবাবপত্র। তবে আসামিপক্ষের কোনো লোকজন নেই।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, ঘটনার পরপরই আসামিপক্ষের পুরুষ লোকজন পালিয়েছে। লুটপাটের ভয়ে নারীরা মালামাল সরিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু পুলিশ বাঁধায় মালামাল না নিয়েই পালিয়েছে নারীরাও। লোকজন না থাকায় তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
১৬ মে লিখিত অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছেন কুমারখালী থানার ওসি আকিবুল ইসলাম। তিনি জানান, ধানকাটা ও পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে একজন খুন হয়েছে। কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। উভয়পক্ষ আত্মীয় স্বজন। আইন – শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এঘটনায় আইনী কার্যক্রম ্রপক্রিয়াধীন। অপরাধীদের ধরতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।