দুই প্রতিষ্ঠানে চাকুরি ও বেতন-ভাতা তোলা সেই শিক্ষককে শোকজ

0
30

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউরিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেই প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মুসা করিমকে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা ও বেতন তোলার কারনে শোকজ করা হয়েছে।

বুধবার (২ জুলাই) বিকালে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে শোকজ করা হয়েছে। চিঠিতে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষককে শোকজের জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নে অবস্থিত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩ সালে নন এমপিও কুমারখালীর চাঁপড়া ইউনিয়নের ছেঁউরিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন মহম্মদ মুসা করিম। এরপর ২০১৫ সালে একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেন তিনি। এখানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ থাকা অবস্থায় ২০২২ সালে এনটিআরসিএ কর্তৃক সহকারী শিক্ষক ( গনিত) পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। যার ইনডেক্স নম্বর – এম ০০২৭৩৯৫। এনটিআরসিএ নিয়োগ নিয়ে তিনি ২০২২ সালের ৩০ জান্য়ুারি ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার গাড়াবাড়িয়া সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসায় যোগদান করেন। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ওই বছরের মে ও জুন মাসের বেতন উত্তোলন করেন তিনি। এরপর শারীরিক অসুস্থতা ও প্রতিষ্ঠানের দুরত্ব উল্লেখ করে ২০২২ সালের ৩০ জুন ওই মাদ্রাসা থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

আরো জানা গেছে, ২০২২ সালের ৬ জ্লুাই ছেঁউরিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত হয়। সেসময় থেকে তিনি এই বিদ্যালয়টিতে নিয়মিত উপস্থিত হন। তবে অবৈধভাবে অতিরিক্ত বকেয়া বেতন তোলার জন্য ভুয়া রেজুলেশন করে অত্র বিদ্যালয়টিতে তাঁর নিয়োগ দেখানো হচ্ছে ২০০৩ সাল। যা শিক্ষা অধিদপ্তরের ব্যানবেজে নেই। এছাড়াও নিয়োগপত্র ছাড়াই মোটা অংকের ঘুষ লেনদনের মাধ্যমে প্রিয়া সুলতানা নামে এক নারীকে অফিস সহায়ক হিসেবে নাম দিয়ে রেখেছেন তিনি।

জানতে চাইলে গাড়াবাড়িয়া সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. আব্দুল আলিম বলেন, ২০২২ সালের ৩০ জান্য়ুারি সহকারী শিক্ষক হিসেবে মহম্মদ মুসা করিম তাঁর প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছিল। দীর্ঘ পাঁচ মাস নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে আসতেন। ওই বছরের মে এবং জুন মাসের বেতন উত্তোলন করে ৩০ জুন পদত্যাগ করে চলে গেছেন আগের বিদ্যালয়ের স্বপদে।

বুধবার বিকালে ফোনে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, শোকজের বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। শোকজের জবাবে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

এ সময় একই সঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরি ও বেতন তোলার কথা স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মুসা করিম। তিনি বলেন, ২০০৩ সাল থেকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিনি। নন এমপিও বিদ্যালয় হওয়ায় মানবেতর জীবন কাটছিল তার। সেজন্য এনটিআরসিএ নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে একটি মাদ্রাসায় কিছুদিন চাকুরি করেছেন তিনি। দুই মাসের বেতনও তুলেছেন। পরে সেখান থেকে পদত্যাগ করে বিদ্যালয়ে ফিরে আসছি।

নিয়োগ ছাড়াই অফিস সহকারী পদে প্রিয়া সুলতানার নাম ব্যানবেজে কিভাবে আসল? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কিছু দিন ওই নারী বিদ্যালয়ে আসতেন। ভুল করে ব্যানবেজে নাম চলে যায়। বর্তমানে ব্যানবেজ থেকে নাম সরানো হয়েছে। বিদ্যালয়েও আসেনা আর।

এ সব অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানা নেই বলে জানিয়েছেন ছেঁউরিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মো.দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ৫ আগষ্টের পরে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী এক সঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরির সুযোগ নেই।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হকবলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ায় তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষককে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিবেন। জবাব সন্তুষ্ট না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন – কুকুরের দখলে

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, প্রতিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য বলা হয়েছে। কোনো অনিয়ম থাকলে বিধিমতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।