স্টাফ রিপোর্টার
কুষ্টিয়ার খোকসার গোপগ্রাম এ জেড ফাজিল মডেল মাদ্রাসার অভিযুক্ত অধ্যক্ষকে স্বপদে ফেরানোর সমঝোতা বৈঠকটি বিএনপি ও জামায়াত কর্মীদের বাকবিতান্ডায় স্থগতি করা হয়। ২৪ শে’র আগস্টের পর শিক্ষক-কর্মচারী ও সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের মুখে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম আত্মগোপন করেন। তদন্ত তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমান পায় তদন্ত কমিটি। ১৩ মাস পর অধ্যক্ষ স্বপদে ফিরতে স্থানীয় বিএনপির কাঁধে ভর করেছে বলে অভিযোগ করছে জামায়াত নেতারা। অধ্যক্ষকে নিয়ে সৃষ্ট জটিলকতায় গত আগস্ট মাসের বেতন পাননি মাদ্রাসার ৩৭ জন শিক্ষক কর্মচারী।
অধ্যক্ষ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরশনে বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মাদ্রার সভাকক্ষে প্রতিষ্ঠানটির দাতা, সুধিজন ও রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতিতে সমঝোতা বৈঠক শুরু করা হয়। এ বৈঠকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলাউদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আনিস উজ্জ জামান, উপজেলা জেলা জামায়াতের আমীর নজরুল ইসলাম, গোপগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান তিন চেয়াম্যানসহ ৫০/৬০ জনের সভা উপস্থিত ছিলেন। সাবেক অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলামকে স্বপদে ফেরানোর পক্ষে গোপগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা শফি আলম বক্তব্য রাখার পর পরই একাধিক শিক্ষক, স্থানী জনগন ও জামায়ত কর্মীরা প্রতিবাদ জানায়। হট্টোগোল শুরু হয়। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে বাকবিতান্ডার পর সভা স্থগিত করা হয়।
মাদ্রাসাটির শিক্ষক আব্দুর রব জানান, ৫ আগস্টের পর গন আন্দোলনের মুখে অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম আত্মগোপনে চলে যান। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি ও শিক্ষকদের টিউশন ফিস আত্মসাত, ঘুষ গ্রহন, প্রতিষ্ঠানের জমি বিক্রিসহ ১৯ টি দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত হয়। সেখানে আত্মগোপনে থাকা অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম দোষী সাবস্ত হন। ১৩ মাস আগে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ ও তার নিকট সহযোগী সহকারী শিক্ষক আব্দুর রহিমের বেতন ভাতা বন্ধ করা হয়। বর্তমান সভাপতি অভিযুক্ত অধ্যক্ষের বেতন পরিশোধের নির্দেশ দেন। চাপের মুখ্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অভিযুক্তদের বেতন না করায় কর্মরত ৩৭ জন শিক্ষক কর্মচারীর আগস্ট মাসের বেতন হয়নি। এসব জটিলতা নিরশোনে দাতা সদস্য, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য ও রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠক ডাকেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন। বৈঠকে সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা শফি আলম ও মাসুদ আহসান শিবলীর বক্তব্যের পর জামায়াত নেতারাসহ অন্যরা প্রতিবাদ জানান। পরিবেশ উতপ্ত হয়ে ওঠে। বাক বিতান্ডায় শুরু হলে বৈঠক স্থগিত করা হয়।
গোপগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শফি আলম অভিযুক্ত অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলামের কিছু দুর্নীতি আছে বলেও স্বীকার করেন। তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসায় জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের একটি চক্র আছে। তারা কোন অধ্যক্ষকে থাকতে দেয় না। তারাই অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম কে অপসারণ করতে চায়।
তিনি আরও জানান, অধ্যক্ষ না থাকায় মাদ্রাসার শিক্ষা ববস্থা ভেঙ্গে পরেছে। প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই তিনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে থানা বিএনপির নেতাদের নিয়ে এসেছিলেন বসে সমঝোতা করদেবেন। কিন্তু জামায়াত নেতারা পরিকল্পিত ভাবে সামাধানের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। তারা হট্টোগোল করেছে।
গোপগ্রাম ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আলতাফ হোসেন বলেন, দুর্নীত দায়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলামকে স্বপদে ফিরিয়ে আনার জন্য বিএনপি নেতারা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারা কুট কৌশলে ৩৭ জন শিক্ষক কর্মচাররি বেতন বন্ধ করেছে। এখন সমঝোতার কথা বলে অভিযুক্তদের স্বপদে ফেরাতে চান।
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম বলেন, সর্বদলীয় বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তার পক্ষের লোকজন ছিলো। সামাধারণ মানুষ সিদ্ধান্ত দেওয়ার কেউ না। এ ছাড়া যে তদন্ত কমিটি তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে তার বিরুদ্ধে রিভিইউ আবেদন করেছেন। তদন্ত কমিটি তাকে না জানিয়ে তদন্ত করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও সহকারী কমিশনার ভুমি রেশমা খাতুনের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, অনেক আগের ঘটনা। এটা তার মাথায় নেই। অফিসে গেলে ফাইল দেখে বলতে পারবেন।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন জানান, সাবেক অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম ও তার সহযোগীর আব্দুর রহিমের তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত হয়। আরবি শিক্ষাবোর্ড ইতোমধ্যে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠিও দিয়েছে। কিন্তু বর্তমান সভাপতি ও এডিসি (রাজস্ব) আব্দুল ওয়াদুদ অভিযুক্তদেরসহ সব শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন করার মৌখিক নিদেশ দিয়েছেন। কিন্তু দাতা ও কমিটির সদস্যরা বেতন না করার পরামশ্য দেওয়া গতমাসে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন হয়নি। সমস্যাটি স্থানীয় ভাবে সমাধানের জন্য তিনি সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন। সেখানে হট্টোহোলের সৃষ্টি হওয়া সভা স্থগিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত অধ্যক্ষের জন্য এখন সাধারণ শিক্ষক কর্মচারীর বেতন বন্ধ রয়েছে। ৩৭ জন শিক্ষক কর্মচারীর পরিবার মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে মাদ্রাসার প্রশাসনিক কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, অভিযুক্ত অধ্যক্ষ তার সহযোগীরে বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক অবসরের পাঠানোর স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল ওয়াদুদের সাথে মুঠো ফোনে কথা বলা হলে তিনি বলেন, শিক্ষকদের বেতন বন্ধের কোন নিদেশ দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ বলতে পারবেন।
উল্লেখ্য, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মোঃ সাইদুল ইসলাম গোপগ্রাম এ জেড ফাজিল মডেল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদ বাগিয়ে নেন। অল্প সময়ের মধ্যে কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান অরুনকে সভাপতিও করে নিজের জামাতা আশরাফুল ইসলামকে শিক্ষক, মেয়ে শেফাকে অফিস সহকারী ও অপর শিক্ষক আব্দুর রহিমের স্ত্রী মাহাফুজাকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন। এ ছাড়া শিক্ষক কর্মরত থাকা কালীন একাধিক পদে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে অথ বানিজ্য করেন। শিক্ষক কর্মচারীদের টাইম স্কেল ও উচ্চতর স্কেল প্রদানের সুপারিশ করতে ১০ থেকে ৫৮ হাজার টাকা দিতে বাধ্য করার অভিযোগ অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মোঃ সাইদুল ইসলাম ও তার অনুগত সহকারী শিক্ষক আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলনের কর্মী, মাদ্রাসার শিক্ষক-অভিভাবকরা আন্দোলন শুরু করে। এরপর থেকে কর্মস্থলে টানা দুই মাস অনুপস্থিত রয়েছেন অধ্যক্ষ ও তার অনুগত সহকারী শিক্ষক।