খোকসার বিএনপি নেতারা আধিপত্য বিস্তারে বাকযুদ্ধে সক্রিয়

0
11

স্টাফ রিপোর্টার

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা বিএনপির নেতাদের পাল্টা-পাল্টি শো ডাউন ও সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া উষ্কানী মূলক বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে। এসব বক্তব্যে ৫ আগস্ট থানায় আগুন দেওয়ার সাথে জড়িত নেতাদের নাম প্রকাশসহ মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের আশ্রয় দেওয়া অভিযোগ উঠে এসেছে। দলের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে নেতাদের মধ্যে মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে দলীয় কর্মকান্ডের স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বিএনপির নেতারা।

জানা গেছে, খোকসা উপজেলা বিএনপি দীর্ঘ দিন নেতৃত্ব শুন্যতায় ভুগছিলো। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রাতারাতি চেহারা পাল্টে দলটির নেতা হওয়া দৌড়ে সামিল হন কয়েক ডজন নবীন প্রবীন। উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় নেতারা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে যান। ইতোমধ্যে ৫ জানুয়ারি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন খানকে আহবায়ক করে ৩১ সদস্যের উপজেলা বিএনপির কমিটি ঘোষনা হয়। এর পর থেকে নেতাদের মধ্যে মুখ দেখা দেখি বন্ধ হয়ে গেছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা কর্মীরা। তারা দ্বিধাবিভক্ত বিএনপি নেতাদের উপর ভড় করেছেন। অনেক আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী বিএনপি নেতাদের শক্তির মহড়ায় সাথী হয়েছেন। যারা আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের প্রথম সাড়ির নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন। তারাই আবার বিএনপির নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। দলীয় ¯েøাগান দিতেও দেখা যাচ্ছে।

উপজেলা বিএনপির নেতাদের বিরোধের প্রভাব পরেছে খোকসা, ওসমানপুর, বেতবাড়ীয়াসহ ৯ ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার নেতা কর্মীদের মধ্যে। আওয়ামী সরকারের পতনের ৭ মাসের মাথায় দ্বিধাবিক্ত বিএনপি নেতা কর্মীরা নিজেদের দলীয় প্রতিপক্ষের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুর করেছে। ক্ষেতের ফসল লুট করে নিয়ে গেছে। এসব ঘটনায় থানায় দুই একটি মামলাও হয়েছে।

খোকসা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি কাউসারুƒল আলম সৈউদ ও যুবদল নেতা রাকিবুল হাসান রাজিবের লোকদের মধ্যে কমপক্ষে তিনবার সংঘর্ষ ও হামলা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। দুই নেতাই আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থেকেছেন।

ওসমানপুর ইউনিয়নে বিএনপির নেতাদের একাধিক গ্রæপ রয়েছে। এই ইউনিয়নে ৭ মাসে কমপক্ষে ৪টি হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। সবপক্ষই গুলি বন্দুক ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ইউনিয়নের বাসিন্দার ছাত্রদলের সাবেক নেতা জুবায়ের রহমান জ্যাকি, তার বাবা জিল্লুর রহমান ও তার চাচা শহিদুল ইসলাম শহিদ মেম্বরকে যৌথ বাহিনী আটক করে। ১৫ এপ্রিল ওই ছাত্রনেতা ও তার বাবা জামিনে মুক্তিপান। উপজেলা বিএনপির বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব আনিস উজ জামান স্বপনের অংশ কারামুক্তদের নিয়ে শো ডাউন করেন। এ ঘটানার পর দিনে ১৬ এপ্রিল বর্তমান আহবায়ক আলাউদ্দিন খানের নেতৃত্বের অংশের নেতারা ওই ছাত্রদল নেতা কে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাবেক অধ্যক্ষ আনিস উজ জামানের বিরুদ্ধে কৃষকের সার ও বীজ আত্মসাতের অভিযেগ করা হয়।

উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক নাফিজ আহমেদ রাজু এক সংবাদ সমম্মেলনে ৫ আগস্টে খোকসা থানায় হামলা ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় নিজের দলের সদস্য সচিব আনিস উজ জামানের ছোট ভাই শরিফ উজ জামান শরিফের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এই নেতা তার বক্তব্যে বলেন, বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষকে মামলার ভয় দেখিয়ে এখনো চাঁদাবাজির করা হচ্ছে। কিছু দেউলিয়া নেতা চাঁদাবাজসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন। ওসমানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একজন সহসভাপতিকে তারেক জিয়ার একটি ভাস্যুয়াল সভায় আসন করে দেওয়ার অভিযোগ করেন খোকসা উপজেলা বিএনপির আহবায়কের বিরুদ্ধে। তার এই বক্তব্যটিও ভাইরাল হয়েছে।

ওসমানপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক নেতা লুৎফর রহমান বলেন, যার কমপরছে, সেই সংবাদ সম্মেলন করছেন। সেই, উল্টা পাল্টা বক্তব্য দিচ্ছেন। দলীয় নেতারদের মধ্যে আত্ম কেন্দ্রিকতার অভিযোগ করেন তিনি।

এই নেতাসহ একাধিক নেতা অভিযোগ করে বলেন, দল ক্ষতায় আসার আগেই স্কুল কলেজের সভাপতি, কৃষকের সার বীজ ভাগ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন দলটির নেতারা। দলীয় কাজের মধ্যে আওয়ামী লীগের লোকনিয়ে শক্তির মহড়া দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে দলে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এই নেতারা। তারা দলের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক নাফিজ আহমেদ খান রাজু তার নিজের দেওয়া বক্তব্য সমর্থন জানিয়ে বলেন, যারা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের হয়ে নির্বাচনী ক্যাম্প করেছেন, বিএনপি নিধনে অগ্রণী ভুমিকা রেখেছেন তাদেরকে আশ্রয় দিচ্ছেন অনেক নেতা। এ ছাড়া দলীয় একাধিক নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করেন।

তিনি আরও জানান, দলীয় শৃঙ্খলা ফেরাতে তিনি শান্তি সমাবেশের উদ্যোগ নিয়েছেন। দলীয় শৃঙ্খলা ফেরাতে দলের ভাই চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার হস্তক্ষেপও কামনা করে তিনি।

উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব সাবেক অধ্যক্ষ আনিস উজ জামান স্বপন বলেন, নেতাদের কথাবার্তার মাধ্যমেও দলের ক্ষতি হয়। ক্ষোভ প্রকাশের একটা ভাষা আছে। বিভিন্ন নেতার করা সংবাদ সম্মেলনকে অসার সংবাদ সম্মেলন আখ্যা দেন তিনি। এ ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বিভিন্ন নেতাদের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য শুনেছেন বলে জানান।

আরও পড়ুন – অন্ধত্ব রুখতে পারেনি আরশাদ আলীকে

উপজেলা বিএনপির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন খান বলেন, সন্ত্রাস চাঁবাজির বিরুদ্ধে বিএনপির আহবায়ক কমিটি শক্ত অবস্থানে। যে সন্ত্রাসীকে যৌথ বাহিনী গ্রেফতার করলো। সেই সন্ত্রাসীদের পক্ষে বিএনপির সদস্য সচিব অবস্থান নিয়ে শো ডাউন করেছেন। এ বিষয়ে তিনি জেলা কমিটির নেতাদের অবহিত করেছেন। তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগের প্রমান চান তিনি।

আরও পড়ুন – বকেয়া বেতনের দাবিতে পৌর ভবনে তালা ঝুলিয়ে কর্মচারীদের কর্মবিরতি

তিনি আরও জানান, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সন্মেলন করা নিয়ে তার কর্মীরা দিনরাত কাজ করে চলেছে। এ সময় একটি চক্র দলের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির পায়তারা করছে।