কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সমন্বয় কমিটিতে যুগ্ম সমন্বয়কারী পদ পেয়েছেন আসাদুজ্জামান আলী নামের সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা। তিনি কুমারখালী পৌর শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এনসিপির কমিটিতে ছাত্রলীগ নেতা পদ পাওয়ায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার শুরু হয়েছে।
গত শনিবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিনাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত ১২ সদস্য বিশিষ্ট সমন্বয় কমিটি অনুমোদন করা হয়। সমন্বয় কমিটিতে আসাদুজ্জামান আলী যুগ্ম সমন্বয়কারী পদ পেয়েছেন।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আসাদুজ্জামান আলী কুমারখালী পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের এলোঙ্গি গ্রামের আবদুর সামাদ পাখির ছেলে। আসাদুজ্জামান আলী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমারখালী শাখার সদস্য সচিব পদও পেয়েছিলেন৷ পদ পাওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন আসাদুজ্জামান আলী। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ্য, সেল্টার বাণিজ্য, ঘুষ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি ও অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তার বাবা পাখির বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। বাবা-ছেলের নানা অপকর্ম ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদ শুরু করেন স্থানীয়রা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করছেন আসাদুজ্জামান আলী।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ, নীতি বহির্ভূত কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়া এবং জনসাধারণের অনাস্থার কারণে আলীর সদস্য পদ বাতিল সহ সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। গত ৩ মার্চ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুষ্টিয়া জেলা শাখার আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান ও সদস্যসচিব মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
রাজনৈতিক অঙ্গনের নেতা-কর্মীরা, সচেতন মহলের লোকজন ও স্থানীয়রা জানান, আসাদুজ্জামান আলী কুমারখালী পৌর শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি পাওয়ার প্যাকটিস করতেন। প্রভাব খাটিয়ে নিজের আখের গুছিয়েছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের বিরোধী দল গুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিলেন। আলী একজন সুবিধাবাদী মানুষ। নিজের স্বার্থের জন্য সে বারবার ভোল পাল্টায়। আর ক্ষমতার বড়াই দেখিয়ে অপকর্মে লিপ্ত হয়। আগে ছিল ছাত্রলীগের নেতা, তারপর বৈষম্যবিরোধী নেতা হন। নানা অপকর্মের কারণে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে লিংক-লবিং করে এনসিপি’র পদ বাগিয়ে নিয়েছে সিস্টেমবাজ আলী।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুষ্টিয়া জেলা শাখার আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান বলেন, গত ২১ জুন কুষ্টিয়া চারটি উপজেলা শাখার সমন্বয় কমিটির অনুমোদন দেয় এনসিপি। এর মধ্যে কুমারখালীর কমিটিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলী পদ পেয়েছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ, নীতি বহির্ভূত কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়া এবং জনসাধারণের অনাস্থার কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমারখালী শাখা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল।
সকল অভিযোগ অস্বীকার করে আসাদুজ্জামান আলী খান বলেন, আমি জীবনবাজী রেখে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছি। মৃত্যুর ভয় না করে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে রাজপথে ছিলাম ও আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছি। স্বৈরাচার সরকার পতনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে আমার। আমি আগে ছাত্রলীগ করতাম, এখন এনসিপি করি। আন্দোলন শুরুর আগে আমি ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছিলাম। আমি এখন উপজেলা এনসিপি কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী৷
আরও পড়ুন – খোকসায় রথযাত্রা ও গ্রামীন মেলা অনুষ্ঠিত
আমার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের লোকজন বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছে। আমি ও আমার বাবা কোনো ধরনের অনিয়ম, দূর্নীতি ও অপকর্মের সাথে যুক্ত না।